রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ: একশো শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। পাঁচ হাজার বাসিন্দার বসবাস গ্রামের মধ্যেই রয়েছে সুবিশাল ঈদগাহ। সেই ঈদগাহের পাশেই এক্কেবারে দেওয়াল ঘেঁষা অবস্থায় রয়েছে ছোট্ট একটি কালি মন্দির। মুসলিম এলাকায় অবস্থিত এই কালি মন্দিরের সম্প্রীতির দেওয়াল ঘেষে দুশো বছর ধরে হচ্ছে কালী পুজো। প্রতিবছরের মতো এবারও সেখানে পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজ্য ও দেশের বর্তমান অসহিষ্ণুতার পরিবেশেও যেন দীপাবলির উৎসবে সম্প্রীতির আবহে ভাসছে মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকের অরঙ্গাবাদের মহেন্দ্রপুর গ্রাম। পুজো উপলক্ষে গ্রামে একদিনের জন্য বসে সুবিশাল মেলা। সম্প্রীতির এই উৎসব তথা মেলাতে শামিল হন হিন্দু মুসলিম সব ধর্মের প্রতিনিধিরা। এলাকার একমাত্র ঈদগাহের পাশেই কালীর মন্দির যেন গোটা বাংলাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরেই বেঁধে দিয়েছে সুতির অরঙ্গাবাদ এলাকার মহেন্দ্রপুর গ্রাম।
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের অন্যতম বিড়ি শ্রমিক রাজমিস্ত্রি অধ্যুষিত গ্রাম সুতির মহেন্দ্রপুর। শিক্ষাদীক্ষায়ও পিছিয়ে রয়েছে এই গ্রাম। মোট পাঁচ হাজার বাসিন্দার বাস গ্রামটি সম্পূর্ণ মুসলিম অধ্যুষিত। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বসবাস করেন মুসলিমরা। পাশের গ্রামে কয়াডাঙ্গা, হাপানিয়া, বাজিৎতপুর ও অরঙ্গাবাদ বাজারের হিন্দু ধর্মের মানুষরা বসবাস করলেও মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে থাকা মন্দিরেই প্রতিবছর কালীপুজো উদযাপন করেন তারা। এলাকার সবথেকে বড় ঈদগাহ তথা মহেন্দ্রপুর ঈদগাহ ময়দানের পাশেই দেওয়াল ঘেঁষা অবস্থায় সুদীর্ঘ কাল থেকেই রয়েছে একটি কালী মন্দির। এলাকায় কোনো হিন্দুর বসবাস না হলেও এই মন্দির এখনও বিদ্যমান। প্রতি বছর কালী পূজার সময় আসলেই এখানে ঘটা করে পুজো পালিত হয়। এলাকার সবথেকে বড় কালীপুজোর মেলাও আবার এখানেই হয়। ঈদগাহের দেওয়াল ঘেঁষেই একদিনের জন্য চলে এই মেলা। মেলায় হিন্দু মুসলিম সকলেই উৎসবের মেজাজে অংশগ্রহণ করেন। হয় বলিও। ঠিক প্রতিবছরের মতো এবছরও এখানে কালি পুজো এবং মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্যান্ডেল তৈরি থেকে পুজো মন্ডপ তৈরি সবকিছুই শেষ লগ্নে। বৃহস্পতিবার রাতেই এই পুজো ও উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারারাত ধরেই ধুমধামের সহিত চলে এই উৎসব।
একশো শতাংশ মুসলিম এলাকায় কালীপুজো উৎসব নিয়ে এলাকার বাসিন্দা এ কে এম হাসানুজ্জামান জানান, দেশের বর্তমান এই অসহিষ্ণুতার পরিবেশে যেভাবে মুসলিম এলাকায় কালীর পূজা হচ্ছে তা বাংলার জন্য এক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের এখানে ঈদগাহের পাশেই দীর্ঘদিন থেকে সম্প্রীতির সহিত কালীপূজা হয়ে থাকে। এই এলাকায় যে যার ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করার পাশাপাশি একে অপরের উৎসবে সামিল হয়ে আনন্দ বিনিময় করে থাকেন সকলে। অন্যদিকে এলাকার বাসিন্দা শেখর দাস , তরুণ দাসরা জানান, মহেন্দ্রপুরের এই মুসলিম এলাকায় আমরা মিলেমিশে সম্প্রীতির আবহে দীর্ঘদিন ধরেই পুজো করে থাকি। আমাদের পূজাতে মুসলিম ভাইরাও সামিল হয়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct