এহসানুল হক, বসিরহাট: আপনজন: ভাটা শিল্পেও এক চরম দুর্দিন নামিয়ে এনেছে অপরিকল্পিত লকডাউন ও মুল্যবৃদ্ধির কারণে। হাজার হাজার শ্রমজীবি ঘোর অন্ধকারে অতিবাহিত করছে তাদের জীবনজীবিকা। ইটভাটা শ্রমিক, মালিক, অনুসারী শিল্পে যুক্ত সবারই এক কথা। বসন্ত দ্বারে হালকা কুয়াশায় ঘেরা রবিবারের সকাল। ইছামতী নদীর পাড় বরাবর অসংখ্য ইটভাটা। বসিরহাট ইটিন্ডা রোড বরাবর।করোনা ও দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির কারনে হোঁচট খেয়েছে নির্মাণ শিল্প। এই পরিস্থিতিতে তলানিতে ঠেকেছে ইট বিক্রি। ফলে বসিরহাটের অনেক ব্যবসায়ী ভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমবার সকালে বসিরহাটের সংগ্রামপুর এলাকায়। এর জেরে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন ইটভাটার বহু শ্রমিক।ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কাঠকয়লা সরবরাহকারী মিলে মহকুমায় ইটভাটা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ। ইট ব্যবসায়ীরা জানান, ইট তৈরির খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ ,কারণ জ্বালানিতে খরচ দ্বিগুণ। ইটের দাম কমিয়েও ক্রেতা মিলছে না, যেখানে ইট বিক্রি হতো ৮০০০ টাকা, সেখানে এখন ৬০০০ বললেও কেউ নিচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ ইট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ভাটাগুলিতে। খরচ সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ভাটা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এদিক বসিরহাটের সংগ্রামপুর উত্তর চব্বিশ পরগনা ব্রিকস সাপ্লাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, বসিরহাট, হাসনাবাদ,মিনাখা ইছামতি বিদ্যাধরী নদীর দুই তীর বরাবর মহকুমা জুড়ে ৫৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটাপ্রতি কমবেশি ২৫০শ্রমিক কাজ করে।এছাড়া ইট সাপ্লায়ার,জ্বালানি সরবরাকারী,ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি যুক্ত অনুসারী অন্যান্য শিল্প। ভিন রাজ্য থেকে মূলত ফায়ার ম্যান ও প্রতিভাটায় অল্পসংখ্যক ভিন রাজ্য থেকে অবাঙালী হিন্দিভাষী শ্রমিক আসে। তারা বেশিরভাগ স্থানীয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইটভাটায় অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান কয়লা। গত বছর টন প্রতি ৯ হাজার টাকায় কয়লা মিলত। এ বার এক ধাক্কায় সেই দাম বেড়ে টন প্রতি ১৭ হাজার টাকা হয়েছে। ওভারলোডিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ইটবহনকারী গাড়ির ভাড়া বেড়েছে। পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ার ফলেও পরিবহণ খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। বসিরহাটের ভাটা মালিক বারিক বিশ্বাস বলেন“এখনও উৎপাদিত ইটের ৭০ শতাংশ অবিক্রিত রয়ে গিয়েছে। এদিকে ভাটা চালু রাখতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই আপাতত ইটভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিআমরা।” উত্তর চব্বিশ পরগনা পরগনা ব্রিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদক মান্তু ঘোষ, রুহুল আমিন মন্ডল জানান, ইতিমধ্যে প্রচুর ইট ভাটায় ইট বিক্রি নেই, কারণ যারা বাড়ি তৈরি করবেন বালির দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বালি কিনতে পারছে না। প্রায় একশ ফুট বালি দশ হাজার টাকা।রডের দাম ছিল যেখানে ৪৩ টাকা ,সেখান এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা। বিশেষ করে করোনা,আন্ডার লোড। পাশাপাশি জ্বালানি খরচ একদম নাভিশ্বাস। এদিন তারা বলেন, শ্রমিকদের আকাশ ছোঁয়া চাহিদা।তার জন্য ভাটা এই বছর বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি।
এই পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েছেন ভাটা শ্রমিক ও ইট ভাটার কাজে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত বহু মানুষ। বছরের এই সময়টায় প্রতিটি ভাটায় মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম পান শ্রমিকেরা। অভিযোগ, এ বার বকেয়া টাকাই দিতে চাইছেন না মালিকপক্ষ। মাজেদ মোল্লা, ওয়াজেদ আলী বৈদ্য, প্রকাশ গায়েন
সহ বিভিন্ন শ্রমিকরা বলেন, এই সময় ভাটা শুরু হয় কিন্তু এখনো যেটা খবর ভাটা বন্ধ হতে যাচ্ছে। আমরা কি করবো বুঝতে পারছিনা। মালিকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে কাজ করি। কিন্তু সেটাও হয়ে উঠছে না। সব মিলিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি আমরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct