এম মেহেদী সানি, হাবড়া: উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হাবড়া-১ নম্বর ব্লকের বেড়গুম-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। পাঁচটি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন কয়েক হাজার মানুষ। স্কুল, কলেজ, গ্রাম পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই বেহাল রাস্তাই একমাত্র ভরসা এলাকার বাসিন্দাদের । কোনদিনই ঠিকঠাক ভাবে সংস্কার করা হয়নি এই রাস্তাটি, দুর্বিসহ যন্ত্রনা ভোগ করছেন দীর্ঘদিন ধরে, এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর ।বাসিন্দারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক ২০১৭ সালের ১২ ই জুন এই রাস্তাটি শিলান্যাস হয়েছিল। পি.এম.জি.এস.ওয়াই থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে ৪.৫৫৬ কি.মি রাস্তা নির্মিত হতে চলেছে বলে বোর্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে একইস্থানে বোর্ড দেওয়া হয়েছিল, দাস পাড়া থেকে বাজ বেলেনী পর্যন্ত ২.৮০০ কি.মি. রাস্তা ১১১,৭৪,৯০০.০০ ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আবারো একটি বোর্ড দেওয়া হয়েছিল যেখানে কাজ শুরুর তারিখ ছিল ২০২০ সালে ৩১ শে ডিসেম্বর। তাতে আরও লেখা ছিল দাস পাড়া থেকে বাজ বেলেনী পর্যন্ত ২.৮০০ কি.মি. রাস্তা ৬১.৫৮১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। সেই সময় কাজ শুরু হলেও তা কয়েকদিন পর আবার বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কুচলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভবেশ চন্দ্র কর বলেন “ রাস্তার সমস্যা দীর্ঘদিনের, তবে তার মধ্যে বছর দুয়েক আগে কিছু লোক এসে মোটামুটি কাজ করেছিলেন, তারপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারো কিছু লোক এসে কয়েকদিন কাজ করে চলে গেলো। আমরা সাধারণ মানুষ খুবই অসুবিধার মধ্যে রয়েছে, রাতে চলাফেরা খুবই সমস্যা। আমরা চাই রাস্তাটা যেভাবেই হোক অতিদ্রুত তৈরি হোক ।” যতীন মাতব্বর বলেন “রাস্তার খোয়া উঠে যাওয়ায় হাঁটা যায় না, সাইকেল চালানো যায় না, ভ্যান-রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন যেতে যায় না।” স্থানীয় গৃহবধূ বুলু ঘোষ বলেন “রাস্তায় চলার মতো পরিস্থিতি নেই।” বেড়গুম-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অসিত কুমার নাগ বলেন “রাস্তাটা দুর্বল ছিল দেখেই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাস্তাটি হোক সেইমতো জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার আওতায় রাস্তাটি তৈরির অনুমোদন পায়। আগে যিনি রাস্তা তৈরির টেন্ডার পেয়েছিলেন, তিনি নিম্নমানের কাজ করার সুবাদে টেন্ডার বাতিল হয়। পরবর্তীকালে রাস্তাটির আবার টেন্ডার হয় তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয় । নতুন কনট্রাক্টর কিছুদিন রাস্তা তৈরির মাল ফেলেছিলেন। এর পর হঠাৎ কি অদৃশ্য কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেল তা আমাদের জানা নেই। জেলা পরিষদ বিষয়টি দেখছেন, জেলা পরিষদ থেকে বিষয়টি জেনে তবেই আমরা বলতে পারব।” স্থানীয় বামফ্রন্ট নেতা অসীম ঘোষ জানান “নকপুল থেকে কুচলিয়ার মধ্য দিয়ে বাজবেলেনী হয়ে মল্লিকপুর পর্যন্ত রাস্তাটির দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা, রাস্তার কাজ শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয়নি। আসলে তৃণমূলেরা কাটমানি পেলে ঠিকাদার কোনরকম কাজ করে চলে যায়, যেভাবে কাজটা করেছে এবং যেভাবে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একশো ভাগের এক ভাগও হয়নি। এ প্রসঙ্গে বেড়গুম-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত একেবারেই উদাসীন।” বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে উপপ্রধান অসিত কুমার নাগ বলেন, এখানে গ্রাম পঞ্চায়েত কোন ফ্যাক্টর না, এই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে রাস্তাটা গিয়েছে মাত্র, এই রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার কাজ এবং এর তত্বাবধানে আছে জেলা পরিষদ। এখানে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কোন দায়বদ্ধতা নেই যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁরা মূর্খ। বিরোধীদের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক প্রমাণ থাকলে আইনের দ্বারস্থ হোক। কেন ভিত্তিহীন মন্তব্য করে এলাকায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন?” তিনি আরও বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই আর্থিক বর্ষে ৩১ শে মার্চের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে।” এলাকাবাসী বিপজ্জনক ওই বেহাল রাস্তা সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct