এহসানুল হক, বসিরহাট: ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি মাথায় করে মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে দু’ কিলোমিটার হেঁটে শ্মশানে গিয়ে হিন্দুদের সাথে দাহ করলেন মুসলিম মানুষেরাও। উভয় ধর্মের মানুষের এই মেল বন্ধনে দাহকার্য সমাপ্ত হওয়ায় সম্প্রতির নজির সৃষ্টি করল বাদুড়িয়ার নারকেল বেড়িয়া গ্রামের মানুষ। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম হিমন রায় বয়স ২৫ বছর। বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য থাকার পর শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। রবিবার দুপুরে ব্রুজ শ্মশানে তার দাহকার্য শেষ হয়।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ,বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর-উদয় পঞ্চায়েতের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে বাড়ি হিমন রায়ের। তার বাবা মৃত। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। মাকে নিয়ে দরমার উপর পলিথিন দেওয়া ছোট্ট একটা ঘরে অত্যান্ত দারিদ্রতাকে সঙ্গে নিয়ে কোন রকমে এক বেলা আদপেটা খেয়ে চলত মা ছেলের সংসার। মা করুণা স্থানীয় বাজারে শাক বিক্রি করেন। অর্থের অভাবে ছেলে হিমন পড়াশুনা করতে না পারায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে যাওয়ার ইতি টানে। মাকে সাহায্য করতে পোষাক সেলাইয়ের কাজে লেগে পড়ে।
সম্প্রতি মিষ্টি স্বভাবের হিমন অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রতিবেশীরা সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ছেলের মৃত্যু হলে কি ভাবে তার ছেলের সৎকার করা হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন করুনা। তা জানতে পেরে হিন্দু,মুসলমান দু’সম্প্রদায়ের মানুষ এগিয়ে আসে। নিজেদের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করে মৃতদেহ দাহকার্যের ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন প্রায় দুই কিলোমিটার পথ দেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় বুরুজ শ্মশানে। তখন জোর হাওয়া বইছে এবং বৃষ্টি পড়ছে। শ্মশানে হাজির হয় হিমনের সহকর্মী এবং সহপাঠিরা। তাদের কথায়,অর্থ এবং লোকবল না থাকার কারনে একটা মানুষকে যথাযগ্য মর্যাদা দিয়ে সৎকার্য করতে অসুবিধা হচ্ছে জানতে পেরে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। সকলে মিলে হিমনের শেষ কাজে হাত লাগাই। গ্রামের মানুষেরা হাতে হাত দিয়ে দাহ কাজ সমাপ্ত করে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct