সেখ রিয়াজউদ্দিন, বীরভূম: রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উৎসব, আনন্দ উৎসব, দুর্গোৎসব। সেই উৎসবকে ঘিরে আনন্দ থাকলেও চোরাস্রোতের মতো গ্রামের সম্মিলিত আনন্দের একটা ঘাটতি ছিল খয়রাশোল ব্লকের লোকপুর থানার করিধ্যা গ্রামে। বিশেষ করে গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা যেন কোথাও একটা হীনমন্যতায় ভুগছিলেন, গ্রামে দুর্গা মন্দির না থাকা বা গ্রামে দুর্গোৎসব পালিত না হওয়াকে ঘিরে। তখন গ্রামের সকলেই অন্যত্র পূজা দেখতে যেতো,তাও আবার কখনো হাঁটু জল বা কোমর জলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশের গ্রাম শাল নদী পেরিয়ে মানকর গ্রামে,বর্তমানে সেখানে মন্দির থাকলেও গ্রামকে গ্রাম জনবসতি উধাও হয়ে গিয়েছে, এখন ধ্বংসস্তূপ ও শ্মশানভূমিতে পরিণত, সে এক ইতিহাস ।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ধীরেন গঁড়াই, বাঁকা চাঁদ গঁড়াই, গণেশ মণ্ডল, সহ বয়স্কদের আড্ডায় প্রায় দুর্গোৎসব নিয়ে চলত আলোচনা, বারবার আলোচনায় মনে যেমন আঘাত লাগত তেমনি আবার সাহস ও করতে থাকে, কিন্তু অর্থনৈতিক অভাবে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে। এরইমধ্যে প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের মেল বন্ধনে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে । গ্রামে সমস্ত পরিবার থেকে চাঁদা সংগ্রহে নামে সেখান থেকেই দুর্গা মন্দিরের জন্য ছয় কাঠা জায়গা ক্রয় করে এবং মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করলে ও মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। গ্রামের দুর্গোৎসব ঘিরে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যাহা এই বছর প্রথম শুভ সূচনা হয় । রুপুষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে একদা স্বপ্ন দেখা গ্রামের সেই প্রবীণ ব্যক্তিদের হাত দিয়েই পুজোর শুভ সূচনা হয়। গ্রামে গঁড়াই, মন্ডল, বাউরি, বাগদী, সেন ও চক্রবর্তী সম্প্রদায়ের নিয়ে মোট ৩৭০ টি পরিবারের বসবাস । প্রবীণদের পাশাপাশি নবীন প্রজন্মের অজয় মণ্ডল, নিরঞ্জন গঁড়াই, কার্তিক গঁড়াই, বুধন গঁড়াই, শংকর গঁড়াই প্রমুখ যুবসমাজের পারস্পরিক আলোচনা, আন্তরিকতা, উৎসাহ,উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয়।"
চার থেকে চুরাশি, সকলের মুখে হাসি", - হ্যাঁ, সেই চিত্রই দেখা যায় যে বয়স্করা একদিকে সমবেত হয়ে বসে রয়েছে। অন্যদিকে যুবরা কোথাও মহিলারা ,সেইসাথে বাচ্চাদের আনন্দের ছোটাছুটি যাহা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, এযেনো গ্রামের সকলের মনস্কামনা পুরনের চিত্র। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে করিধ্যা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রবীণ ব্যক্তি কার্তিক গঁড়াই এবং পাশে নবীন মুখ শঙ্কর গঁড়াই জানালেন তাদের দুর্গোৎসব নিয়ে সুখ, দুঃখ সহ দীর্ঘ লড়াইয়ের নানান কথা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct