বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিবাদ এখন স্তিমিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিষয়টির ফয়সালা করা হলেও তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। যদিও ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামন্দিরের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। অযোধ্যায় অতীত হয়ে উঠছে বাবরি মসজিদের ইতিহাস। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও বাবরি মসজিদ-রামমন্দির নিয়ে বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। তাই রামের ইতিহাস থেকে শুরু করে রামমন্দির, বাবর থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ- সমগ্র বিষয়টি নিয়ে এই অনুসন্ধিৎসু প্রতিবেদনটি লিখেছেন দিলীপ মজুমদার। দ্বাবিংশ কিস্তি।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে (ষোড়শ লোকসভা ) বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় ২৮২টি আসন লাভ করে। পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচন বিজেপি যে আসন লাভ করেছিল, ষোড়শ লোকসভায় তার চেয়ে ১৬৬টি আসন বেশি। বিজেপির নেতৃত্বে এন ডি এ পায় ৩৩৬টি আসন। ২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষা নস্যাৎ করে বিজেপি লাভ করে ৩০৩টি আসন, এন ডি এ জোট পায় ৩৫৪টি আসন। নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন।
২০১৯এর ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলার রায় দান করেন। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ দিন শুনানির পর যে ৫ বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে রায় দেন তাঁরা হলেন : রঞ্জন গগৈ, এস এ বোবদে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এস আব্দুল নাজির, অশোকভূষণ। রায় প্রকাশের ১৫ দিন আগে থেকে একটা সাজো সাজো রব দেখা যায়। হয়তো সরকারের এমন একটা ধারণা হয় যে এই রায়ে কোন পক্ষ অসন্তুষ্ট হতে পারে। তাঁদের ক্ষোভ সরষ্টি করতে পারে অশান্তি। তাই অযোধ্যায় নিয়োগ করা হয় প্যারা মিলিটারি ফোর্স ও পুলিশ। আয়োজন করা হয় সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের। উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। নজর রাখা হয় ৩১টি জেলা ও ৬৭৩ জন ব্যক্তির উপর। সমগ্র উত্তরপ্রদেশ ও ব্যাঙ্গালোর, ভোপাল, জয়পুর, লক্ষ্মৌ, মুম্বাইএ জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। রায় দানের দিন জম্মু ও কাশ্মীর, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের স্কুল ও কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়। তেলেঙ্গানার বিভিন্ন শহরে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চারমিনার ও মক্কা মসজিদসহ হায়দ্রাবাদের বিভিন্ন স্থানে ২০ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করা হয়। মুম্বাই ও চেন্নাইতে যথাক্রমে ৪০ হাজার ও ১৫ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হয়। যে রায়কে নিয়ে এমন সাজো সাজো রব তার বিষয়সূচি একবার দেখে নেওয়া যাক :
Judgment, 2019
A. Introduction
B. An overview of the Suits
C.Evidence : a bird’s eye view
D. The aftermath of 1856-7
D.1 Response to the wall
D.2 Period between 1934-49
E. Proceedings under section 145
F. Points of determination
G. The three inscriptions
H. Judiciary review and characteristics of a mosque in Islamic law
I. Places of worship Act
J. Juristic personality
J. 1 Development of the law
J.2 Idols and juristic personality
J.3 Juristic personality of the first plaintiff
j.4 Juristic personality of the second plaintiff
K. Analysis of the Suits
L. Suit.1 Gopal Singh Visharad
L.1 : Pleadings
L.2 : Issues and findings of the High Court
L.3 Analysis
M. Suit 3 : Nirmohi Akhara
M.1 Pleading
M.2 Conflict between Suit 3 and suit 5
M.3 Issues and findings of the High Court
M.4 Limitation in Suit 3
M.5 Oral testimony of the Nirmohi witnessrs
M.6 Nirmohi Akhara’s claim to possession of the inner courtyard. Documentary evidence in regard to the mosque 9 1934—49)
N. Suit 5 : The Deities
N.1 Array of parties
N.2 No content by state of UP
N. 3 Pleading
N.4 Written statements
N.5 Issues and findings of the High Court
N.6 Shebaits and exclusive right to sue ? A Suit by a worshipper or a person interested. Nirmohi Akhara and shebaiti rights
N.7 Limitation in Suit 5 . The argument of perpetual minority
N.8 The Suit of 1885 and Res Judicta
N.9 Archaeological report
N.10 Nature and use of the disputed structure : oral evidence
N.11 Photographs of the disputed structure
N.12 Vishnu Hari inscriptions
N. 13 The polestar of faith and belief. Travelogues, Gazetters and Books
N. 14 Historian’s report
O. Suit 4 : Sunni Central Waqf Board
O.1 Analysis of the plaint
O.2 Written statements
O.3 Issues and findings of the High Court
O.4 Limitation in Suit 4
O.5 Applicable legal regime and Justice, Equity and Good conscience
O. 6 Grants and recognition
O.7 Disputes and cases affirming possession. Impact of Suit of 1885. Incidents between 1934
and 1950
O.8 Proof of Namaz
O.9 Placing of Idols of 1949
O.10 Nazul land
O.11 Waqf by uses
O.12 Possession and adverse possession
O.13 Doctrine of the lost land
O.14 The smokescreen of the disputed premises-- the wall of 1858
O.15 Analysis of evidence in Suit 4
O.16 The Muslim claim to possessory title
Q. Reliefs and directions
অযোধ্যা রায়ের মূল কথাগুলি সূত্রাকারে এই রকম :
১. অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর ভূমি হিন্দুরাই পাবেন। সেই ভূমিতেই তৈরি হবে রামমন্দির। ২. কেন্দ্র ৩ মাসের মধ্যে মন্দির তৈরির প্রকল্প তৈরি করবে। মন্দির তৈরি পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ গঠন করা হবে। ৩. বাবরি মসজিদের ভিতরের ও বাইরের চত্বর পাবে ট্রাস্ট। ৪. ১৯৯৩-এ বিতর্কিত জমি ঘিরে কেন্দ্র বাড়তি প্রায় ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কেন্দ্র চাইলে সেই জমিও মন্দির প্রকল্পের জন্য ট্রাস্টকে দিতে পারে। ৫. মসজিদ তৈরির জন্য অযোধ্যাতেই ৫ একর জমি দেওয়া হবে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার উপযুক্ত ও চোখে পড়ার মতো জায়গায় জমি দেবে। ৬. বাবরি মসজিদের ভিতরের চত্বর যে শুধু তাঁদের দখলেই ছিল, তা মুসলিমরা প্রমাণ করতে পারেন নি। বাইরের চত্বর পুরোপুরি হিন্দুদের দখলে ছিল। ৭. এলাহবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার জমিকে রামলালা বিরাজমান, নির্মোহী আখড়া ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলেছিল। ওই সিদ্ধান্ত আইনত টেকে না। ৮. বাবরি মসজিদের নীচে পুরনো কাঠামো ছিল বলে পুরাতত্ব পর্যবেক্ষণের রিপোর্টকে ‘আন্দাজ’ বলে খারিজ করা যায় না। তা ইসলামি কাঠামো নয়, তবে মাটির নীচের কাঠামো নির্দিষ্ট মন্দির ছিল, রিপোর্টে সে কথাও বলা নেই। ৯. সেবায়েত হিসেবে নির্মোহী আখড়ার দাবি খারিজ। তবে আখযাকে ট্রাস্টে নিতে পারে কেন্দ্র। ১০. রামলালা বিরাজমানের মামলাই সমর্থনযোগ্য। ‘রামলালা’ আইনসিদ্ধ ব্যক্তি। তবে রাম জন্মভূমি আইনসিদ্ধ ‘ব্যক্তি’ নয়। ( আনন্দবাজার পত্রিকা ১০.১১.১৯২০)
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
এর আগের পর্বগুলি পড়ুন:
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/২১
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/২০
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৯
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৮
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৭
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৬
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৫
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৪
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৩
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১২
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১১
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১০
রাম, রামায়ণ ও বাবরি মসজিদ নিয়ে রাজনীতির নেপথ্যে/১
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct