আপনজন ডেস্ক: প্রত্যাশিতভাবে ভবানীপুর উপনির্বাচনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর ফলে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙলেন। মমতা ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি ৪৯,৯৩৬টি ভোটে জিতে রেকর্ড ভেঙে ৩৪ বছরের শাসনকে গদিচ্যুৎ করেছিলেন। আর এবারের উপনির্বাচনে বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের বিরুদ্ধে মমতা জিতলেন ৫৮,৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে।
এই জয়ের পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কালীঘাটে তাঁর বাসভবনের উঠোনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সুিপ্রমো বলেন, ‘নন্দীগ্রামে আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার জবাব ছিল ভবানীপুরের রায়। নন্দীগ্রাম নির্বাচনের ফলাফল আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমি ভবানীপুরের সমস্ত ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছি।’
তবে তৃণমূল শুধু ভবানীপুরে নয়, মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর ও শামসেরগঞ্জেও বিপুল ভোটে জিতেছে। শামসরেগঞ্জে বিজেপি ও সিপিএম উভয় প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। এর ফলে বাম ফ্রন্টের প্রার্থীরা তিনটি আসনেই জামানত খোযালেন।
সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে পরাজয়ের পর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের চেয়ার ধরে রাখতে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া দরকার বলে ভবানীপুরে মমতা জয় তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানা গেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যখন মোট ভোটের ৭১.৯ শতাংশ পেয়েছেন, তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিজেপির প্রিয়াঙ্কা ২২.১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
তবে, ভবানীপুরে প্রতিটি ওয়ার্ডে মমতার লিড পাওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিগত বিধানসভা নির্বাচনে অবাঙালি অধ্যুষিত দুটি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল যা মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ। উপনির্বাচনে বিজেপি যখন তাদের অবাঙালি ভোট-ব্যাঙ্কে আস্থা রেখেছিল, তখন মমতা স্পষ্ট করে দিলেন তিনি গেরুয়া শিবিরের দুর্গে ভাঙন ধরিয়েছেন।
এই জয় নিয়ে এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, মমতা ভবানীপুরের সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছেন। ২০১১ সালে তিনি ৪৯,৯৩৬ ভোটে জয়ী হন এবং উপনির্বাচনে মমতা ৫৮,৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এবার, তিনি তার নিজের রেকর্ড ভাঙলেন।
মমতা জয়কে স্বাগত জানিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, প্রায় ৫৭ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে এসেছিলেন। ফলে বিপুল সংখ্যক ভোটার হয় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি অথবা তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলেও তিনি জানান।
কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ভোটারদের কম ভোটদানে দেখা গেছে যে ভবানীপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপনির্বাচনে কোনও আগ্রহ নেই।
ভবানীপুরে মমতার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ২৬,৩২০ ভোট পেয়েছেন এবং সিপিআই (এম) এর শ্রীজিব বিশ্বাস ৪২০১টি ভোট পেয়েছেন।
জয় প্রসঙ্গে মমতা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন ‘আমি ভবানীপুরসহ বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এই ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নন্দীগ্রামে আমাকে পরাজিত করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার যোগ্য জবাব দিয়েছে ভবানীপুরের মানুষ। আমি বিচারাধীন বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। গণনা শেষ হয়েছে, এবং আমরা ৫৮,৮৩২ভোটের ব্যবধানে আসনটি জিতেছি।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct