কুতুবউদ্দিন মোল্লা, কুলতলি: মাছ,কাঁকড়া ধরে কোন রকমে চলতো জীবনজীবিকা। জ্যোস্না শী’র স্বামী শঙ্কর ও দুই দেওর শশাঙ্ক ও কিংকর। হঠাৎ শী পরিবারের বুকে নেমে আসে বিপর্যয়। রায়দিঘীর সূর্য্যপুরের নন্দকুমার পুরের গ্রামের জ্যোস্না বিয়ে হয়। কুলতলির মৈপীঠ এলাকার ভুবনেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দারা তারা। নদীতে কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় কিংকর এর। শোক কাটিয়ে উঠে কোন রকমে চলছিল শী পরিবার।ধীরে ধীরে শঙ্কর-জ্যোস্না দম্পতির দুই কন্যা সন্তান বড় হতে থাকে। গত ছয় বছর আগে বড় মেয়েকে পার্শ্ববর্তী পাড়ার জয়দেব মন্ডলের সাথে বিয়ে দেয়। জামাই ও মৎস্যজীবী। দুর্ভাগ্য এক সময় গত পাঁচ বছর আগে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে পড়ে জয়দেব। সেই সময় বাঘের আক্রমণ থেকে জামাইকে উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসেন জ্যোস্না। কিন্তু প্রাণে বাঁচাতে পারেননি। এরপর দুঃখ, যন্ত্রণা নিয়ে চলছিল দরিদ্র শী পরিবারের। ছোট মেয়ে রুম্পা স্থানীয় ভুবনেশ্বরী জয়কৃষ্ণ উচ্চমাধ্যমিক হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।খরচ ও বেড়ে চলেছে শী পরিবারের। একমাত্র আয় বলতে মাছ-কাঁকড়া ধরা।ফলে সংসারের জোয়াল কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ ২৬ বছর খেয়াতরী বেয়ে চলেছেন জ্যোস্না শী। শী পরিবারে বুকে মহাবিপর্যয় নেমে আসে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাদের নৌকা রেখে কাঁকড়া ধরার সুদ ফেলছিলেন। ঘটনাচক্রে একটু বেশী কাঁকড়া ধরার আশায় দুরে একটি খাড়িতে চলে যায় জ্যোস্না। এরপর ফিরে আসতেই চোখের সামনে দেখতে পায় স্বামীকে বাঘে ধরেছে। টানতে টানতে এক লহমায় গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বাঘ। স্বামীর করুণ পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। স্বামী একবারই করুণস্বরে জানিয়েছিল ‘জ্যোস্না তুমিই আমাকে বাঁচাও’। তিনি তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেন। আমাকে বেঁচে থাকতে গেলে স্বামীকে যেভাবেই হোক বাঘের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে।মুহূর্তেই খালি হাতে এক লাফে বাঘের পিঠে চড়ে বসেন। স্বামীকে উদ্ধার করতে বাঘের মুখ, কান,গোঁফ ধরে পাক দিতে থাকেন। বাঘও তার শিকার ছাড়তে নারাজ। মিনিট কুড়ি লড়াইয়ের পর একসময় বাঘের দুই কানে স্বজোরে হাতের আঙুল ঢুকিয়ে পাক দিতে থাকে। রণে ভঙ্গ দেয় রুদ্রমূর্তির বাঘ। শিকার ছেড়ে হুঙ্কার করতে থাকে। তবে দ্বিতীয়বার আর আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কোন রকমে স্বামীকে বাঁচিয়ে নৌকায় তোলেন। এরপর দ্রুত গতিতে নৌকার দাঁড় বেয়ে গ্রামের ঘাটে এসে প্রতিবেশীদের খবর দেয়। তারাই রক্তে ভেসে যাওয়া শঙ্কর কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়।সেখান থেকে আবার কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস পর স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন জ্যোস্না দেবী। স্বামী সুস্থ হলেও তার বাম হাত একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী এমন করুণ পরিস্থিতিতে কি ভাবে বাঁচবেন শী পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা সেই চিন্তায় ঘুম উবে গিয়েছে এযুগের জ্যোস্না দেবীর।
আহত শঙ্করের স্ত্রী ও কন্যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কাতরভাবে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বলেছেন দিদি আমাদের বাঁচান। না হলে মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct