আপনজন ডেস্ক: আজ রাজ্যের তিন কেন্দ্রে নির্বাচন। তবে, সামশেরগঞ্জ–জঙ্গিপুরে নির্বাচন নিয়ে ততটা আগ্রহ না থাকলেও সবার নজর ভবানীপুরের উপনির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে যোগ দিয়েছে নাগাড়ে বৃষ্টি। ফলে তিন কেন্দ্রেই নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন সকাল থেকেই সর্বত্র প্রস্তুতি তুঙ্গে।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জলমগ্ন বিধানসভার ৮টি ওয়ার্ডের বহু জায়গা। তার ওপর বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বৃহস্পতিবারও। সব মিলিয়ে চিন্তায় শাসক বিরোধী সব পক্ষই। যদিও, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী প্রিয়াংকা টিবরেওয়াল। ভবানীপুর উপনির্বাচনে হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। বামেদের সঙ্গে প্রচারেও যায়নি। তবে, বাম প্রার্থী রয়েছে। সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন শ্রীজীব গোস্বামী।
গত বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর আসনে জয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু পরে তিনি পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হয়। ডাকা হয় উপনির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতাকে ভবানীপুর থেকে জেতানোর লক্ষ্যেই শোভনদেব পদত্যাগ করেন। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসন থেকে হারেন মমতা। এরপরও ভারতীয় সংবিধান মেনে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছিল তৃণমূল। সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে বিধানসভা নির্বাচনের হারের ছয় মাসের মধ্যে মমতাকে রাজ্যের যেকোনো একটি বিধানসভা আসনে জিতে আসতে হবে। তাই ৫ নভেম্বরের মধ্যে জিতে আসতেই হবে। সেদিক থেকে নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, মমতার জয় নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে মার্জিন কত হবে সেটাই নিয়ে প্রশ্ন। যদিও ইতিমধ্যে, আগেই ভোটে রিগিং হবে বলে ধুয়ো তুলেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
নির্বাচন কমিশন কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করছে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে নিশ্চিদ্র করতে বিধানসভা কেন্দ্রের ৯ টি জায়গায় হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে। এর পাশাপাশি ৮ টি মোবাইল ভ্যান মোতায়েন করা থাকবে। ২৩ টি আরটি মোবাইল ভ্যান হাজির থাকবে যে কোনও পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপের জন্য।
অন্যদিকে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবানীপুরের অন্তর্গত ৯ টি থানাকেও চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোটা বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে ২,৫৬৩ জন পুলিশ থাকবে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত করেছে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকাজুড়ে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে পাঁচজনের বেশি জমায়েত করা যাবে না। ২৬টি বুথে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সব বুথেই ওয়েব কাস্টের ব্যবস্থা থাকবে। সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ইভিএম মেশিনকে নিরাপদ রাখার জন্য পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হবে। যাতে ইভিএম মেশিন জলে না ভিজে যায়। প্রত্যেক ভোট–কর্মীকে দেওয়া হচ্ছে রেনকোট। প্রত্যেকটি বুথে সেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেখানে যেখানে জল জমার সম্ভাবনা আছে, সেখানে পাম্প বসানো হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট দুটি নৌকার ব্যবস্থা রাখছে যাতে তিন ফুটের উপর জল জমলে সেগুলি ব্যবহার করা যায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ভবানীপুরের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার ৪৫৬। এঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৪৩ জন, মহিলা রয়েছেন ৯৫ হাজার ২০৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৪ জন। ভবানীপুরে মোট ২৮৭টি বুথে ভোট হবে। যার মধ্যে প্রধান বুথ ২৬৯টি এবং অক্সিলিয়ারি বুথ ১৮টি। এই বিধানসভায় সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট রয়েছে ২২ শতাংশ। বেশির ভাগই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct