আপনজন ডেস্ক: বেশ কিছুদিন ধরে রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে ঘিরে অচলাবস্থা চলছে। বীরভূমের শান্তিনিকেতনে অবস্থিত এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সুনাম ছিল তা এই সব সমস্যাজনিত কারণে আজ নষ্ট হওয়ার পথে। বিশেষ করে বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের মেলবন্ধনের অভাব থাকায় পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠছে। তার প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও শিক্ষার মানোন্নয়নে।
বিশেষ করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে গেরুয়া পন্থী মনোভাবের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সেই মনোভাবের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সামনে আসতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বভারতীতে আরবি, উর্দু বিষয়ে পড়ানোর জন্য স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় এই বিভাগ সুকৌশলে তুলে দেওয়ার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রীতির পীঠস্থান বলে পরিচিত বিশ্বভারতীতে ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে আসছিল সেখানকার ‘ভাষা ভবনের’ অন্তর্ভুক্ত ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগ। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুরিতে যখন স্নাতকোত্তরে আরবি, ফার্সি, উর্দু পড়ার সুযোগ কম ছিল তখন অন্যতম ভরসা ছিল বিশ্বভারতীর এই বিভাগ। কিছুদিন আগে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়াগঠিত মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে আরবি িবষয় অন্তর্ভুক্ত না করায় প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। অবশেষে সেখানে আরবি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিন্তু রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও আরবি বা উর্দু নিয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ নেই।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতীর ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগের দৈন্য দশা সামনে আসতে শুরু হয়েছে। তাই অভিযোগ উঠেছে, সুকৌশলে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীয় থেকে আরবি, ফার্সি, উর্দু পড়ার সুযোগ থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলছে। তার কারণ হিসেবে উঠে আসছে, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগে শিক্ষকের অভাব। এই বিভাগে যে কটি বিষয় পড়ানো হয় তার মধ্যে পার্সিয়ান বিভাগ ছাড়া আর কোনও বিভাগে স্থায়ী শিক্ষক নেই। আরবি বিভাগে মাত্র এক অতিথি শিক্ষক আবদুল্লাহ মোল্লাকে দিয়ে পঠনপাঠন চালানো হচ্ছে। এমনকী অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের জন্য কোনও শিক্ষকপদ বরাদ্দ নেই বলে জানানো হয়েছে।
ফলে, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের কোনও চিন্তাভাবনা নেই বলে অভিযোগ জোরালো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী শিক্ষক ছাড়াই চলছে গুরুত্বপূর্ণ আরবি বিভাগ। আর উর্দু ও ইসলামকি স্টাডিস বিভাগে কোনও শিক্ষকই নেই। এই তথ্য সামনে এসেছে তথ্য জানার অধিকার আইনে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর অনলাইনে করা আরটিআইয়ের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলা হাইস্কুলের শিক্ষক তথা হাওড়ার জগদীশপুরের বাসিন্দা তৌহিদ আহমেদ খান। সেই প্রশ্নের জবাব বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট রেজিস্ট্রার দিয়েছেন ২৩ সেপ্টেম্বর। তৌহিদ আহমেদ খানের প্রাপ্ত আরটিআই তথ্যে ফুটে উঠেছে বিশ্বভারতীর করুণ দৃশ্য।
আরটিআই তথ্যে তৌহিদ আহমেদ খান জানতে চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগের শুধুমাত্র আরবি বিষয়ের জন্য কতজন অ্যাসিস্ট্যান্ট লেকচারার, কতজন অ্যাস্ট্যিান্ট প্রফেসর, কতজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও কতজন প্রফেসর বরাদ্দ রয়েছেন। তার উত্তরে বিশ্বভারতীয় বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগে কোনও অ্যাসিস্ট্যান্ট লেকচারারের পদ নেই। তবে, একজন প্রফেসর, একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের পদ বরাদ্দ রয়েছে। আর অ্যাস্ট্যিান্ট প্রফেসরের পদে বরাদ্দ রয়েছেন তিনজন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারাবিক, পার্সিয়ান, উর্দু অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস’ বিভাগের প্রফেসর আছেন একজন ড. নিয়াজ আহমেদ ও দুজন একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. ওয়াসিফ আহমেদ ও ড. আতিকুর রহমান। এরা সবাই কিন্তু পার্সিয়ান বিভাগের শিক্ষক। আরবি বিভাগে রয়েছেন শুধুমাত্র একজন অতিথি শিক্ষক আবদুল্লাহ মোল্লা। আর উর্দু ও ইসলামকি স্টাডিজ বিভাগে কোনও শিক্ষকই নেই।
বিশ্বভারতীয় নিজেই যেখানে জানাচ্ছে আরবি বিষয়ের জন্য তিনজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের পদ রয়েছে, সেখানে কিন্তু দর্ঘিদিন দরে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। তাহলে কি এবার বিশ্বভারতীতে আরবি, উর্দু, ইসলামিক স্টাডিস পড়ার সুযোগ হারাতে চলেছে পড়ুয়ারা, সেই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব়্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ) ব়্যাঙ্কিং ২০২১-এর বিচারে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে বিশ্বভারতীয়র স্থানে নীচের দিকে চলে গেছে। এই তালিকায় বিশ্বভারতীয় ৩৪ নম্বরে চলে এসেছে। তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন নিয়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct