রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ: মোহাম্মদ ইসমাইল শেখ। বয়স ২৫। উচ্চতা মাত্র ২ ফুট নয় ইঞ্চি। পরনির্ভরশীলতা নয়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও প্রাইভেট শিক্ষকতাই নেশা ইসমাইলের। করছেন ব্যবসাও। প্রতিবন্ধকতা কোনো বড় বাধা নয়, এই বার্তা দিয়ে সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোহাম্মদ ইসমাইল শেখ।
মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জের কোহেতপুর নামক গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ইসমাইলের। বাবা আব্দুল মাতিন পেশায় কবিরাজ ও বিড়ি কন্ট্রাক্টর। মা চামেলি বিবি বিড়ি শ্রমিক। পরিবারের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ইসমাইল। যদিও ছেলেদের মধ্যে বড় সে। জন্মের পর দুই বছর পর্যন্ত শরীরের স্বাভাবিক গঠন থাকলেও হঠাৎ অজানা একটি রোগে স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায় ইসমাইল। তারপর আর বেড়ে ওঠা হয়নি। দুই ফুট নয় ইঞ্চির শরীর নিয়েই বড় হতে হয়েছে ইসমাইল সেখকে। এখন সে ভরা যৌবন ২৫ বছর বয়সে পা রেখেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেকটাই এগিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই স্থানীয় স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা ও সাহেবনগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছে ইসমাইল। গ্রাজুয়েশনে ভর্তি হলেও মাঝে বেশ কিছু সমস্যায় পড়ে গ্রাজুয়েশন ইন কমপ্লিট থেকে যাই। কিন্তু তার শিক্ষার জেদ মোটেও কমেনি। ফলে ২০২০ সালে নতুন করে গ্রাজুয়েশন করতে নেতাজি সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন প্রতিবন্ধী যুবক। শুধু পড়াশোনা বা ব্যবসায় নয়, ইসমাইল ভ্রমণ পিপাসুও বটে। অতিরিক্ত চলাচল করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলেও তিন চাকার একটি স্কুটি বাইক নিয়েই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছুটে চলেন তিনি। ইসমাইল শেখ জানান, নিত্যদিন সকালে ফ্রেস হয়েই শুরু হয় প্রাইভেট টিউশনি। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চলে টিউশনি। প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট পাঁচটি টিউশনি করেন ইসমাইল শেখ। সম্প্রতি কোহেতপুর গ্রামের সকলের কাছে এক জনপ্রিয় মুখও বটে। প্রতিমাসে সরকারের কাছে ১০০০ টাকা মানবিক ভাতা পেলেও আগামীদিনে সুযোগ মিললে সরকারী চাকুরী করারও ইচ্ছা রয়েছে তার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct