আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়র বিপদ সম্পর্কের দেশের মানুষকে নানা সাবধান বাণী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতে হিন্দু ধর্ম এখন হুমকির সম্মুখীন। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথা নিয়ে বিজেপি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করে। যদিও, অমিত শাহ হিন্দু ধর্ম কী ধরনের হুমকির সম্মুখীন তা নিয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি। বরং, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যে হুমকির সম্মুখীন তার জন্য দায়ী মুসলিমরা। তবে, তার পক্ষে কোনও প্রমাণের কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেননি। অমিত শাহের সেই ‘হিন্দু ধর্ম খতরে মে হ্যায়’ বক্তব্য যে শুধু অনুমান নির্ভর তথা কাল্পনিক ছিল তা জানিয়ে দিল অমিত শাহেরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নাগপুর ভিত্তিক আরটিআই কর্মী মোহনিশ জাবালপুরের এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, হিন্দু ধর্ম বিপদের মধ্যে এমন কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। হিন্দু ধর্মের আক্রমণ বা হুমকির কথা যে বলা হয়েছে তার প্রমাণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে না থাকায় এই ধরনের আশঙ্কাকে নিছক 'অনুমান নির্ভর' বা 'কাল্পনিক' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে, তথাকথিত হিন্দু ধর্ম হুমকির মযুখে অমিত শাহের এই আপ্তবাক্য যে ভুল ছিল তা তারই মন্ত্রকের দেওয়া আরটিআইয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রমাণ হয়ে গেল।
জানা গেছে, মোহনীশ জবলপুরে গত ৩১ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে আরটিআই মারফত প্রশ্ন করেছিলেন, দেশের ‘হিন্দু ধর্মের প্রতি হুমকি’র কি কি প্রমাণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আছে। তার এক মাস পরে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ভি এস রানা সেই আরটিঅাইয়ের প্রেক্ষিতে বলেছেন, তাদের কাছে ‘হিন্দু ধর্মের’ জন্য কথিত বিপদের কোনও প্রমাণ নেই বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক তা জানে না।
উত্তরে অারও বলা হয়, আরটিআই আইনের নিয়ম অনুযায়ী, পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার (পিআইও) কেবল মাত্র তাদের কাছে উপলব্ধ তথ্য সরবরাহ করতে পারেন, অথবা যা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ছে। তবে, যেহেতু কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে কোনও রেকর্ড নেই, রানা যুক্তি দেখান জবলপুরের প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব নয় এবং তাই এটিকে বাতিল হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
আরটিআই কর্মী জবলপুরে বলেন, “এই প্রথম এমএইচএ-র একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলেছেন যে ‘হিন্দু ধর্মের প্রতি হুমকি’ সম্পর্কিত যে কোনও প্রশ্নও কাল্পনিক এবং তিনি স্বীকার করেছেন যে তারা এই জাতীয় কোনও কাল্পনিক বিষয়কে সমর্থন করার মতো কোনও নথি বা প্রমাণ পাননি।।
তাই জবলপুরে অভিযোগ করেন, বিজেপিও তার সহযোগী সংগঠনগুলো কায়েমি রাজনৈতিক লাভের জন্য, হিন্দুদের মধ্যে একটি ভয়ের মনোরোগ উস্কে দিচ্ছে এই বলে যে তাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় পরিচয় গুরুতর বিপদের মধ্যে রয়েছে। অথচ, তা সত্যি নয়।
তবে, জাবালপুরে বলেছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা ভি এস রানা হিন্দুরা হুমকির মুখে এমন প্রমাণ না থাকার কথা বলায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, এই তথ্য সামনে আসার ফলে এই সংবেদনশীল বিষয়টি সমস্ত রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে রাখা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেও স্বস্তি দেওয়া দরকার।