আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর থেকে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছিলেন রাজনীতিতে আসবেন না। কিন্তু সব জল্পনার অবশেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েনের হাত ধরে যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ফলে ভবানীপুর উপনির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খেল বিজেপি।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী করেছে একদা বাবুল সুপ্রিয় ঘনিষ্ঠ প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়অলেকে। তাই বিজেপি থেকে বাবুল সুপ্রিয়কে বলা হয়েছিল নির্বাচনী প্রচারে আসার জন্য। পত্রপাঠ না করে দিয়েছিলেন বাবুল। কিন্তু এভাবে তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন তা ভাবতে পারেনি বিজেপি। তবে, অনেকে এই পদত্যাগ ও তৃণমূলের যোগদানের পিছনে নানা রহস্য দেখছেন। রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা, বাবুলকে রাজ্যসভায় টিকিট দেওয়ার জন্য অর্পিতা ঘোষকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। তবে, তা নিয়ে নিয়ে এখনও তৃণমূলের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া না হলেও বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, তিনি বাংলার উন্নয়নের জন্য রাজনীতিতে ফিরলেন। আসলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাওয়ার পর থেকে বাবুল সুপ্রিয একটু বেসুরো হচ্ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্ষেপের সঙ্গে লিখেছিলেন ‘চললাম। বিদায়!’
যে বাবুল সুপ্রিয় কটু কথা বলে তৃণমূলের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনিই এখন তৃণমূলে গিয়ে বললেন, ‘তৃণমূলে যোগ দিয়ে আমি গর্বিত। এবার দেশসেবায় কাজ করতে পারব।’ ৫০ বছর বয়সী বাবুল সুপ্রিয় একজন সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ২০১৪ সালে তিনি প্রথমে বর্ধমানের আসানসোল আসনে সাংসদ হন। হন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। ২০১৯ সালে আবার তিনি সাংসদ হন আসানসোল আসন থেকে। বাবুলের এই তৃণমূলে আসা নিয়ে শাসক দলের বহু সাংসদ ও রাজনীতিকক স্বাগত জানালেও নেটিজেনরা কিন্তু বাবুলের অতীত নিয়ে সরব হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে ফিরে এলেও আসানসোরে নিহত ইমদাদুল্লাহ রশিদির পুত্রকে কি ফেরানো যাবে? শুধু এক্ষেত্রে নয়, বেফাঁস মন্তব্যের জন্য বাবুলকে নিয় বিতর্ক শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আসানসোলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। সেখানে তিনি এক ব্যক্তিকে ‘পা ভেঙে’ দেওয়ার হুমকি দেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি কোনো এক ব্যক্তির জন্য অসন্তুষ্ট য়েহে যান। তিনি বলে ওঠেন, ‘’নড়ছেন কেন...? দয়া করে বসে যান...’’ কিন্তু ওই প্রতিবন্ধী তার শাররিক কারণে ঠিক থাকতে না পারায় বাবুল রাগের মাথায় এই ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘’আপনার কি হয়েছে...? কোনো সমস্যা হচ্ছে ...? আমি আপনার একটা পা ভেঙে হাতে লাঠি ধরিয়ে দিতে পারি।’
সেই সময় বাবুল সুপ্রিয় নিজের নিরাপত্তা রক্ষীদের বলেন, যদি এই ব্যক্তি আর নড়েন তাহলে যেন এই ব্যক্তির পা ভেঙে দিয়ে হাতে লাঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে দেবস্মিতা চৌধুরী নামে এক ছাত্রী ডিগ্রি নেওয়ার পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সেই ঘটনার নিন্দা করে এবং পরিবারের কাছ থেকে এই পড়ুয়ারা কী ধরনের শিক্ষা পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সঞ্জয় সোম নামে এক জন ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টটির প্রশংসা করে নিজের ওয়ালে সেটি শেয়ার করেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
স্বাভাবিক ভাবেই বাবুলের পোস্টের সমর্থনে এবং বিরোধিতায় নানা মন্তব্য আসতে থাকে কমেন্ট ট্রেলে। বেশ কয়েকটি আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জবাবও দেন বাবুল। বিতর্ক শুরু হয় মুস্তাফিজুর রহমান নামে এক তরুণকে তাঁর দেওয়া জবাব ঘিরে। ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া পরিচিতি অনুযায়ী মুস্তাফিজুর কলেজ পড়ুয়া। তিনি বাবুল সুপ্রিয়র পোস্টের নীচে লেখেন, ‘‘বাবুলদা আপনি কতটা শিক্ষিত আর আপনার গুরু দিলীপ কত শিক্ষিত, যে কি না গরু থেকে সোনা বার করে।’’ জবাবে বাবুল সুপ্রিয় লেখেন, ‘‘আগে তোমায় তোমার দেশে ফেরত পাঠাই, তার পর পোস্টকার্ডে জবাব দেব।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct