আপনজন ডেস্ক: আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালিবান নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এ ঘটনা ঘটে। কাবুল দখলের এক মাসের মধ্যেই নেতাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আরও কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চোখ রাঙাচ্ছে তালিবান সরকারকে। দেশটির অর্থনীতি খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আফগানরা।
তালিবানের একটি সূত্র বলেছে, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদ-পদবি নিয়ে সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার ও মন্ত্রিসভার এক সদস্যের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। তবে তালিবান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনা স্বীকার করেনি।
তালিবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তালিবানের একটি সূত্র জানিয়েছে, মোল্লা বারাদার ও শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্যবিনিময় হয়েছে। তখন সেখানে থাকা তাদের অনুসারীরাও পরস্পরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খলিল উর-রহমান হাক্কানি আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
কাতারভিত্তিক এক জ্যেষ্ঠ তালিবান নেতা বলেন, গত সপ্তাহেও একবার তর্ক-বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেখানে বিতণ্ডা তৈরি হওয়ার কারণ হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে সন্তুষ্ট নন মোল্লা বারাদার।
তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে, তা নিয়েই বিরোধের শুরু। বারাদার মনে করেন, তার মতো ব্যক্তিরা, যারা কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন, তাদের কারণেই তালিবানের ‘জয়’ অর্জিত হয়েছে।
অন্যদিকে, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যরা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ের মাধ্যমে তালিবানের জয় এসেছে। আর তারাই ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। বারাদারের দাবির পেছনে অন্যতম কারণ হলো তিনি তালিবানের হয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের শান্তিচুক্তির আগে তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এ ছাড়া বারাদার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বাহিনী ও পশ্চিমা বাহিনীকে লক্ষ্য করে যেসব বড় হামলা চালানো হয়েছিল, সেগুলোর মুখ্য ভূমিকায় ছিল হাক্কানি নেটওয়ার্ক। হাক্কানি নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত একটি সংগঠন।
অর্থনৈতিক সংকট চোখ রাঙাচ্ছে : অর্থ সংকটে দেশ পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে তালিবান সরকার। গত মাসে তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি দেখা গেলেও গত ২০ বছরে উন্নয়ন খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা দেশটির অর্থনীতি খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটির ব্যাংকিং সিস্টেম বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
ব্যাংকগুলোর সামনে দেখা যাচ্ছে গ্রাহকের দীর্ঘ সারি। সেখানে সপ্তাহে মাত্র ২০ হাজার জনকে টাকা তোলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাও সর্বোচ্চ ২০০ ডলার করে। রিজার্ভের সুরক্ষায় এই সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাড়ছে খাদ্যের দাম। কাবুলে খাবারের দাম দেখা গেছে আকাশচুম্বী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct