দিলীপ মজুমদার: কোথায় গেলেন তিনি ? তাঁকে দেখতে পাচ্ছি না। কথা শুনতে পাচ্ছি না তাঁর। টিভির পর্দায় তিনি নেই। সংবাদপত্রের পাতায় তিনি নেই। এ কেমন রহস্য ? অথচ রাজভবন আছে। সেখানকার রক্ষী আর আমলারা আছেন। তিনিও আছেন সেখানে। একটা মানুষ শুধু থাকলেই তো হল না , থাকার ব্যাপারটা জানান দিতে হয়। আগে যা তিনি দিতেন। সকালে উঠে দিতেন। দুপুরে ভাতঘুমের পরে দিতেন। সন্ধেবেলা চা খেতে খেতে দিতেন। এমন কি কোন কোন দিন মধ্যরাতেও দিতেন। সেই তিনি আছেন অথচ নেই। মুখর কবি নীরব হয়ে গেছেন একেবারে। ভাল্লাগছে না তাই।
তাঁর কি কোন অসুখ করেছে ? করোনায় আক্রান্ত কি! তাহলে কি ছিনে জোঁক সাংবাদিকরা সে খবর ফাঁস করতেন না ? পাপারাৎসিরা এখানেও আছেন। রাজভবনের বেড়া টপকে তাঁরা ঠিক ঢুকে যেতেন। বের করে আনতেন হাঁড়ির খবর। নাঃ, তিনি অসুস্থ নন। করোনাও তাঁকে কাবু করে নি। তাহলে?
মন খারাপ হতে পারে। স্বাভাবিক।
তাঁর মতো গঙ্গজলে ধোয়া মানুষটির গায়ে কলঙ্ক লেপন করার চেষ্টা করেছেন। এই যেমন মহুয়া মৈত্র। সাংসদ মহুয়া অভিযোগ এনেছেন রাজভবনে তিনি নিজের লোককে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। স্বজনপোষণের অভিযোগ। তিনি প্রতিবাদ কিরেছিলেন। তবে সে প্রতিবাদের খুব একটা জোর ছিল না। তারপরে কুণাল ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন হাওয়ালায় তিনি নাকি টাকা নিয়েছেন। তারও প্রতিবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর মতো পুরুষসিংহের গর্জন শোনা যায় নি। তাই আমাদের মনের কোণায় একটু সন্দেহ দানা বাঁধে। রাজ্য সরকারের দুর্নীতি নিয়ে যিনি এত সরব হয়েছেন, তিনি নিজেও পাঁক মেখেছেন দুর্নীতির ?
তারপরে একদিন দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে গেলেন। কী যে কথা হল তাঁর সঙ্গে, জানা গেল না। সাংবাদিকদের কাছে দুজনেই মুখে কুলুপ এঁটে রইলেন। নিন্দুকরা বলল, মুখ্যমন্ত্রী ধমক-চমক দিয়ে এসেছেন। তাঁর দুর্বলকেন্দ্রে আঘাত দিয়েছেন। কিন্তু এ কথা সত্যি বলে মনে হল না। কেননা তাঁর খুঁটির জোর আছে। মেড়া কোদে খুঁটির জোরে। ঘন ঘন দিল্লি ছোটেন তিনি। অমিত শাহজি আর মোদিজির সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের পরামর্শমতো কাজ বা অকাজ করেন। ভেবেছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কুপোকাৎ হয়ে যাবে। সে আশায় ছাই দিল বুড়বক ভোটাররা। তারপরে ভেবেছিলেন আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা বলে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করবেন। করলেনও। ধোপে টিকল না।
কত আশা ছিল মনে। উপরাষ্ট্রপতি হবেন। কিংবা সে রকম আর কোন পদ। রঞ্জন গগৈ মশায় যেমন রামমন্দিরের রা্য দিয়ে রাজ্যসভার সদস্য হয়ে গেলেন। তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারী মশায় যেমন বিরোধী দলনেতা হয়ে গেলেন। পদ মেলে পদলেহন করলে। তিনি কী বাকি রেখেছেন কিছু ? তবু ভরিল না চিত্ত। দিল্লির প্রভুদের চিত্ত ভরল না তাঁর এত চেষ্টায়। অভিমান হয় না ? তিনি তো রক্ত-মাংসের মানুষ।
এখন বোধ হয় তিনি বুঝতে পেরেছেন তিনি বাতিলের দলে। আর এক রাজ্যপাল তথাগতজির দৃষ্টান্ত সামনে আছে। অনেক লেখালেখি করেছেন তথাগতজি। অনেক বাঁকা কথা। ফাঁকা আওয়াজ। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারলেন না। না ঘরকা না ঘাটকা। তাঁরও কী এই ভবিতব্য ?
হয়তো তিনি নির্জনে গান করেন : আমার একুল ওকুল দুকুল গেল..
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মশায়কে এমন উদাস, এমন বিষণ্ণ দেখলে বড় কষ্ট হয়। কোথায় পাব আগের সেই সদা প্রতিবাদী মানুষটিকে ?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct