আপনজন ডেস্ক: গত বছরের মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজে তবলিগি জামাতের ইজতেমা বা সম্মেলনকে কেন্দ্র দেশজুড়ে প্রবল হইচই হয়। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে বিজেপি সহ আরও বিভিন্ন দল করোনা ছড়ানোর জন্য তবলিগি জামাতের ইজতেমাকে দায়ী করে। এরপর দিল্লি প্রশাসন নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজ শুধু বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি তবলিগি জামাতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিরুদ্ধে মহামারি ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করে।
একই ধরনের মামলায় দেশ ও বিদেশ থেকে নিজামুদ্দিন মার্কাজে জড়ো হওয়া তবলিগি জামাতের বহু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের রায়ে তাদের বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেওয়া হলেও উত্তরপ্রদেশের জেলে বন্দি থাকেন বেশ কয়েকজন তবলিগি জামাতের সদস্য। তাদের মধ্যে বরেলি জেলা আদালত গত শুক্রবার ৯জন থাইল্যান্ডের নাগরিক সহ ১২জন তবলিগি জামাতের সদস্যকে বেকসুর খালাস বলে রায় দিয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষার আইনজীবী মিলন কুমার গুপ্ত বলেন, তাবলিগী জামাতের ১২ জন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে থাইল্যান্ডের নয়জন নাগরিক, তামিলনাড়ুর দুইজন এবং একজন স্থানীয়। বরেলি জেলার শাহাজাহানপুর মসজিদ থেকে এদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল করোনা মহামারি আইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, বিদেশি ও পাসপোর্ট আইন প্রভৃতি লঙ্ঘন করার দায়ে। মামলার শুনানির সময় আদালত তবলিগি জামাতের ওইসব সদস্যকে আদালত বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে।
দিল্লির আদালতও ৩৬জন বিদেশি তবলিগিকে বেকসুর খালাস বলে রায় দিয়েছিল। তবে তার আগে মুম্বাই হাইকোর্ট ও এলাহাবাদ হাইকোর্ট গ্রেফতারকৃত তবলিগি জামাতের বহু দেশি-বিদেশি নাগরিককে নির্দোষ বলে মুক্তি দিয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর দিল্লি আদালত ৩৬জন বিদেশিকে মুক্তি দেয় যাদের বিরুদ্ধে মহামারি আইন উল্লংঘন করার অভিযোগ ওঠে। এদের মধ্যে ১৪টি দেশের নাগরিক শামিল ছিলেন। এর আগে দিল্লির সাকেত আদালত ছটি দেশের আটজন নাগরিককে মুক্তি দেয়। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ার জন্য খালাস দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দিল্লির চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অরুণ কুমার গর্গ, ৩৬ জন বিদেশি তবলিগিকে বেকসুর খালাস বলে রায় দেন। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা কোভিড-১৯ বিধি ও বিদেশি ভিসা আইন উল্লংঘনের অভিযোগ খারিজ করে দেন।
এদের মুক্তি দেওয়ার সময় আদালত জানায়, তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অন্যান্য নথিপত্র দেখার পর দেখা গেছে যে এই সময়ের মধ্যে এই লোকেরা মারকাজের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। ভিসা নিয়ম লঙ্ঘন করে ধর্মপ্রচারে অংশগ্রহণের অভিযোগও খারিজ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তবলিগি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোরগোল হয়। বিজেপি এবং এক শ্রেণির মিডিয়া দেশে করোনা সংক্রমণের জন্য তবলিগিদের দায়ী করলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তবলিগিদের বিরুদ্ধে ভিসা আইন লংঘনেরও অভিযোগ ওঠে। যদিও নিজামুদ্দিন মারকাজের তরফে দাবি করা হয়, দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার কারণেই বিদেশি তবলিগিরা যে যার দেশে ফিরতে পারেননি। দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তবলীগি জামাতের সম্মেলনে অংশ নিতে প্রায় ৩৫০০জন বিদেশি তবলীগি এসেছিলেন। তাদের অনেকেই ভিসা আইন সহ অন্যান্য বিধি ভঙ্গের অভিযোগে জেলবন্দি হন।
এরপর বোম্বে হাইকোর্ট এক রায়ে বলে, তবলীগি জামাত কর্মীদের বালির পাঁঠা করা হয়েছে। তাই তাদের উপর থেকে সব এফআইআর তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি নালাওয়াড়ে ও বিচারপতি এম ভি সেউলিকারের গঠিত বোম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বোম্বে হাইকোর্ট তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিলেও নিম্ন আদালতের রায়ে তাদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যদিও ক্রমে ক্রমে নিম্ন আদালতের নির্দেশ পেয়ে তারা ছাড়া পান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct