আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বৃহস্পতিবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সমর্থকদের উপর লাগাতার আক্রমণের অভিযোগে মামলা হয়। কলকাতা হাইকোর্টে এ নিয়ে ৬টি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সিবিআইয়ের নির্দেশ দেয়। তবে হাইকোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, এটা কোনও মামুলি হিংসার ঘটনা নয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে সমস্ত মামলা যেখানে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তির হত্যা বা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আদালত রাজ্যকে সমস্ত মামলার রেকর্ড সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মামলা গুলির তদন্ত করবে সিট। তিন জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে সিট। সিট-এর তিনজনের কমিটিতে থাকবেন আইপিএস অফিসার সুমন বালা সাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণভীর কুমার। সিটের নজরদারিতে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের কোনও এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি আইপি মুখার্জি, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের গঠিত বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। যদিও রাজ্য সরকার সে হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)-এর রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলেছে।
যদিও নির্বাচন পরবর্তী হিংসার পর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছিল বেঞ্চ। সেই তদন্ত কমিটি মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছিল। অভিযোগ, ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে ৩৩৫৪টি অভিযোগ এসেছে। পুলিশ ৬৫১টি এফআইআর দায়ের করেছ। অপরাধের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশও করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাকেই মান্যতা গিয়ে রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
এই রায় বেরনোর পর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুনাল ঘোষ ট্যুইটারে বলেছেন, ‘হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে হাইকোর্ট নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করছি না।’
তাই তৃণমূল কংগ্রেস যে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যে বিধানসভা পরবর্তীতে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল হয়েছে। ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন এক জনস্বার্থ মামলাকারী। একতরফাভাবে কোনও শুনানি আটকাতে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন জনস্বার্থ মামলাকারী অনিন্দ্যসুন্দর দাস।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct