অমরজিৎ সিংহ রায়, বালুরঘাট: ১৫ আগস্ট নয়, ১৮ আগস্ট স্বাধীন ভারতবর্ষর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বালুরঘাট। ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট মধ্য রাত্রী পর্যন্ত এই এলাকাটি পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। সীমানা জটিলতায় পরতে হয়েছিলো বালুরঘাটকে। যার ফলে ১৮ আগস্ট বালুরঘাটের স্বাধীনতা দিবস রূপে পালিত হয়। তাই ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস হলেও তিনদিন পর বালুঘাট স্বাধীন হয় অর্থাৎ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রসঙ্গত, স্যার সিরিল র্যাডক্লিফের ঘোষণা অনুসারে ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানে এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু তখন আজানা আশঙ্কা নেমে এসেছিল বালুরঘাটবাসির কাছে। ১৪ আগস্ট রাতে পাকিস্থানি সৈন্যবাহিনী ও পাকিস্তানি নেতারা বালুরঘাট হাই স্কুলে হাজির হয়। আর ১৫ আগস্ট মহকুমা শাসক পানাউল্লা পাকিস্তানের পতাকা তোলেন। শহরের নাট্যমন্দির থেকে জেলা সদর আদালত পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে পাকিস্থানি পতাকায় সুসজ্জিত ছিল। এই সময় বালুরঘাটের মানুষ ও পাকিস্তানি ফৌজের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বেশকিছু জায়গায় সাধারণ যুবক ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্র ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বালুরঘাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের সাহসিকতায় পাকিস্তানি পতাকা হাইস্কুল চত্বরে তুলতে পারেননি। সেই সময় স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ বালুরঘাট, মালদা ও অসমের বেশ কিছু এলাকাকে “নোশনাল এরিয়া” বলে ঘোষণা করেছিলেন। অবশেষে ১৭ আগস্ট আধুনা, বাংলাদেশের ধামারহাট, পোরসা, পত্নীতলা থানা বাদ দিয়ে বালুরঘাট সহ মোট পাঁচটি থানা ভারতের অন্তরভুক্ত হয়। ১৮ আগস্ট সকালে বালুরঘাটে ভারতীয় জাওয়ানরা পজিশন নেয়। অবশেষে ১৮ আগস্ট রাত ১২ টায় সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় বালুরঘাট স্বাধীনভারতের অন্তর্ভূক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় জাতীয় পতাকা তোলেন। এরপর ১৯ আগস্ট বালুরঘাট হাই স্কুল ময়দানে স্বাধীনতার বিজয় উৎসব পালন করে বালুরঘাটবাসি। ১৮ আগস্ট অন্য আবেগ বালুরঘাটবাসীর মধ্যে।
তবে এনিয়ে দিল্লিতে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির তৎপরতায় তিনদিন পর বালুরঘাট সহ মালদার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এবিষয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি সুশোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, বালুরঘাটের লোকের চেতনাবোধ অনেক কমে গেছে। আজ উত্তাল বালুরঘাট হওয়া উচিত ছিল। দুঃখের বিষয় অনেক মানুষ হয়তো জানেনই না। এটা আমাদের ব্যর্থতা , যে আমরা সেভাবে প্রচার করতে পারিনি। বালুরঘাট তিনদিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরে, সরোজরঞ্জন তাকে আন্দোলন করে মুক্ত করে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত করেন। সরোজরঞ্জন যখন ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সামিল হন, সে সময় বালুরঘাটে অধিবাসী ছিল মাত্র ১৮০০ মত। তিনি ১০ হাজার লোক জোগাড় করেছিল কয়েক মাস , কয়েক বছরের চেষ্টায়। যার ফলে ব্রিটিশের পতাকা নামিয়ে ভারতবর্ষের পতাকা তুলেছিলেন। এদিকে, প্রতিবারের মত এই দিনটিকে স্মরণ করে এবারও বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে জাতীয় পতাকা তোলা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন বালুরঘাট বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক ড: অশোক লাহিরি, ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা সভাপতি বিনয় কুমার বর্মন সহ অন্যান্য কার্যকর্তা গণ। ইতিহাস বিজরিত এই দিনটিকে স্মরণ করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct