আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় নিত্যযাত্রীর মতো এ রাজ্যে বিজেপির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন। বিজেপির আশা ছিল মোদির যে জনপ্রিয়তা রয়েছে তা চমক দেবে। পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন মোদিপ্রবণ হয়ে উঠবে। কিন্তু দেখা গেছে মোদির সেই জনপ্রিয়তা উবে গেছে বিধানসভা নির্বাচনের সময়। আর মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মোদির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকতে চলেছে। সেই আঁচ বুঝেই মমতা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জোর বিজেপি প্রচারে নামার উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে মোদির কোনও প্রভাব এ রাজ্যে না পড়ায় বোঝাই যাচ্ছিল মোদি ইমেজ ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এবার ইন্ডিয়া টুডের ‘মুড অফ দ্য নেশন’ সমীক্ষায় সেই সত্যতাই ফুটে উঠেছে। গত বছরে দেশে পছন্দের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সমীক্ষায় মোদি যেখানে ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে এবারের সমীক্ষা তা মাত্র ২৪ শতাংশে পৌঁঁছেছে।
ফলে, এই সমীক্ষার নিরিখে বিরোধী ঐক্য আরও সুসংহত হওয়ার সুযোগ পাবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি হঠাওয়ের যে ডাক দিযেছেন তা যে অসম্ভব নয়, তা ইন্ডিয়ার টুডের সমীক্ষাতেই পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য দ্বিতীয় সবচেয়ে জনপ্রিয় পছন্দের তালিকায় রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ, যাকে ১১ শতাংশ মানুষ প্রথম পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় স্থানে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পছন্দ হিসেব তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। রাহুল পেয়েছেন ১০ শতাংশের সমর্থন।
সমীক্ষা বলছে, ক্রমে মোদির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকছে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের সমীক্ষায় যেখানে দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষের প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় ছিলেন মোদি, তা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এক ধাপে আসে ৩৮ শতাংশে। আর তা কমতে কমতে আগস্ট মাসে ২৪ শতাংশে ঠেকেছে। এভাবে চরতে থাকলে আগামী ২০২৪ সারের লোকসভা নির্বাচনে মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানুষের পছন্দের তালিকা থেকে হারিয়ে যেতে পারেন, সেই সম্ভাবনা জোর হয়ে উঠেছে এই সমীক্ষা রিপোর্টে।
তবে, ২০২০ সালে আগস্টের সমীক্ষায় যোগী আদিত্যনাথের পক্ষে তিন শতাংশ মত দিলেও চলতি আগস্টে তা বেড়ে ১১ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। আর রাহুল গান্ধির পক্ষেও ৮ শতাংশদের সমর্থন বেড়ে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, যে যার রাজ্যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তারও সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে।
তাতে সবচেয়ে এগিয়ে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। স্ট্যালিন তার নিজের রাজ্যে ৪২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। এর পরে রয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তার পরের স্থান কেরলের পিনারাই বিজয়ন, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরের। তারপরে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাকে সমর্থনের হার ৩০ শতাংশ। আর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও যোগী আদিত্যনাথ পেয়েছেন মাত্র ২৯ শতাংশের সমর্থন।
মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব নিয়েও রিপোর্ট যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। যারা দেশের অর্থনীতি খারাপ বলে মনে করেন এমন মানুষের হার গত জানুয়ারি মাসে ছিল ১৭ শতাংশ। তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশ। ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে না। অথচ, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এই মত ছিল ৩৫ শতাংশ। ফলে মোদি যতই দেশে করোনা প্রতিরোধে সাফল্য দাবি করুক না কেন, মানুষের মেন যে আস্থা যোগাতে পারছেন না তা ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct