নাজমা আহমেদ: করোনা আমাদের অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। দিনে দিনে চেনা পৃথিবীটা অচেনা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উপায় তো নেই। এই বদলে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে।
ঘরে বসে অফিসের কাজটা আমরা তাও ম্যানেজ করে ফেলছি। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভিডিয়ো কল বা সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগ থাকছে নিয়মিত। দূরে থাকা মা-বাবার কাছে ওষুধপত্র বা খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজটাও অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে গিয়েছে হোম ডেলিভারি অ্যাপের সৌজন্যে।
সবই তো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কেউ নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের প্রশ্ন যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন তো ভাবনাচিন্তা তো আসেই। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সমস্যায় আছে শিশুরা। তাদের খেলাধুলো বন্ধ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না দিনের পর দিন। গ্যাজেটে হাত দিলেই বকুনি খেতে হত ক’দিন আগে পর্যন্ত, এখন সেই গ্যাজেটেই চলছে লেখাপড়া। বইখাতা এখনও অনেকেরই হাতে পৌঁছোয়নি -- স্কুলের পাঠানো পিডিএফের ভরসায় ক্লাস নিচ্ছেন জীবনে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে বসা শিক্ষক। সেই ক্লাসের পড়া শুনে, বুঝে হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে বাচ্চাকে। এই পরিস্থিতিতে অসুবিধে হওয়া স্বাভাবিক – সন্তানকে সাহায্য করতে হবে আপনাকেই। তবে তার আগে নিজে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন।
গোটা দুনিয়া টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশের সামনেও নানা সমস্যা আছে, তার মধ্যে অনলাইন ক্লাস একেবারে নতুন একটা বিষয়। তাই প্রথম দিকে কিছু অসুবিধে হবেই। ধৈর্য ধরুন একটু, অপেক্ষা করুন। বাচ্চারা সব কিছুই তাড়াতাড়ি শেখে, এই পরিস্থিতির সঙ্গেও তারা আপনার চেয়ে আগে মানিয়ে নেবে। আপনি স্রেফ অসুবিধে হলে তার পাশে থাকুন, ভরসা জোগান। প্রথম দিন থেকেই খুঁত বাছবেন না শিক্ষকের, তাঁকেও মানিয়ে নেওয়ার সময় দিন। কিছুদিনের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক আবার আগের জায়গাতেই ফিরে যাবে।
এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কারও কারও একটু বেশি সময় লাগতেই পারে। হয়তো আপনার সন্তান আগে যতটা সাবলীল ছিল, নতুন এই পঠন-পাঠনের সঙ্গে তত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারছে না। তাতে ঘাবড়ে যাবেন না। সময় দিন। এটা একটা বিরাট ট্রানজিশন -- সবার মানসিক গঠন সমান হয় না।
বাচ্চার খেলাধুলোর সময় বরাদ্দ রাখুন অবশ্যই।
অনলাইন ক্লাস আর ভিডিয়ো গেমের ভরসায় দিন কাটাতে হলে কিন্তু সুস্থতার সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে, সামনের মাঠে, বাড়ির ছাদে বা লনে খেলাধুলো করা উচিত। এতে সন্তানের মানসিক জড়তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠবে। শারীরিক শ্রমের কোনও বিকল্প নেই।
সন্তানের সঙ্গে যতবেশি সময় দেবেন ততই ভালো হবে এই সময়।
সন্তানের সঙ্গে খানিকক্ষণ বই পড়ুন একসঙ্গে বসে। দরকারে গল্প পড়ে শোনান। রোজ ছোটোখাটো কিছু একটা লিখতে বলুন। কারন অডিয়ো-ভিস্যুয়াল মাধ্যমটাই এত শক্তিশালী যে বাচ্চাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, বড়োদেরই নেশা লেগে যায়! তাই পুরোনো অভ্যেসগুলো বজায় রাখার দায়টা আপনাকেই নিতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct