আপনজন ডেস্ক: মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রাদেশিক শহর দখলে নিচ্ছে তালিবান। ফলে দেশটিতে চলছে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। তীব্র এ হামলার মুখে এখন আফগানিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছে দেশটির হাজার হাজার মানুষ। অনেকে আবার উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে রাজধানী কাবুলে।
এদিকে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তাদের সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। যাতে লড়াইয়ের এ সময় বেসামরিক মানুষ সেসব দেশে আশ্রয় নিতে পারে।
শুক্রবার তালিবান দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহার দখল করে নিয়েছে। এটি আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। ৬ লাখ মানুষের এই শহরটি একসময় তালিবানের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল।
বিদ্রোহীরা কাছের আরেকটি শহর লস্কর গাহও দখল করেছে। তারা এখন আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ প্রাদেশিক রাজধানী শহর নিয়ন্ত্রণ করছে। গত একদিনেই কালাত, তেরেনকোট, পুল-ই আলম, ফিরুজ কোহ, কালা-ই-নাও এবং লস্করগাহ দখল করেছে তালিবানরা। এর মাধ্যমে সাত দিনে আফগানিস্তানের ১৮টি প্রাদেশিক রাজধানী এখন তালিবানদের দখলে।কাবুলে শরণার্থীদের ঢল
তালিবানের তীব্র হামলার মুখে যে হাজার হাজার মানুষ এখন পালিয়ে রাজধানী কাবুলে এসে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন গুদাম ঘরে বা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানাচ্ছে, এদের মধ্যে প্রায় ৭২ হাজার শিশুও রয়েছে।
এসব আশ্রয়হীন মানুষ এখন খাবার, আশ্রয় এবং ওষুধসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সামনে আর কোনো উপায়ও নেই। হয় তাদেরকে নিজেদের এলাকায় সম্ভাব্য মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে, নয়তো কাবুলে এসে এরকম দুর্দশার মধ্যে থাকতে হবে।
কাবুলের উপকণ্ঠে এরা এখন বাস করছেন অস্থায়ী এক শিবিরে।
৩৫ বছর বয়সী আসাদুল্লাহ তার স্ত্রী ও অল্প বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি কুন্দুজের রাস্তায় একজন হকার হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু তালিবান তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি রাস্তায় হকারি করতাম, খাবার আর মশলা বিক্রি করতাম, কিন্তু যখন তালিবান হামলা করলো তখন আমরা কাবুল চলে আসলাম। এখন আমাদের হাতে রুটি কেনার টাকাও নেই। আমার সন্তানের জন্য ওষুধ কিনবো, তার সাধ্যও নেই।’
আমাদের সব বাড়িঘর, জিনিসপত্রে আগুন লেগে গেছে। কাজেই আমরা কাবুলে পালিয়ে এসেছি। আমরা আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইছি। আমাদের বাড়িতে রকেট আর মর্টারের গোলা এসে পড়েছে। গত সাত দিন ধরে সেখানে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। আমাদের খাওয়ার মতো রুটি পর্যন্ত ছিল না, কারণ সব বেকারি, দোকান এবং বাজার বন্ধ ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, তিনি উত্তরের শহর পুল ই খুমরি থেকে তার স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, তার স্বামী যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন। আমাদের একটা সুন্দর জীবন ছিল। কিন্তু বোমা হামলার কারণে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছি এবং এখানে চলে এসেছি। আমাদের এক কাপড়ে খালি হাতে এখানে চলে আসতে হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct