কুতুবউদ্দিন মোল্লা, ক্যানিং: থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দুই শিশুর জন্য এক বছর রক্ত দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার করে শপথ নিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এনম মানবিক উদ্যোগ ক্যানিং মহকুমা তথা জেলায় সর্বপ্রথম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এমন মানবিক উদ্যোগ কে প্রশংসা জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
উল্লেখ্য প্রতিনিয়ত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়।ঠিক তেমন ভাবে প্রতিমাসে রক্তের জোগান দেওয়ার জন্য প্রত্যন্ত সুন্দরবনের দুই অসহায় পরিবারের দুই শিশুর রক্তের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় প্রতিমাসে এক ইউনিট রক্তের জন্য। বিগত দিনের মতো ওই দুই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর পরিবারের লোকজনদের রক্তের জন্য আর হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না।দুই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর এক বছর রক্তের জোগান দেওয়ার দায়িত্বভার গ্রহন করলো এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
বিগত কয়েকদিন আগে ক্যানিংয়ের ‘সঞ্জয়পল্লী উন্নয়ণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’র উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালিত হয় ক্যানিং থানার অন্তর্গত সঞ্জয়পল্লী এলাকায়। কবি গুরুর প্রয়াণ দিবস পালনের পাশাপাশি এক রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। দ্বিতীয় বর্ষের ওই রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পরেশরাম দাস। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলাপরিষদ সদস্য সুশীল সরদার, তপন সাহা, মাতলা ১ও ২ পঞ্চায়েত প্রধান হরেন ঘোড়ুই,উত্তম দাস,ক্যানিং থানার আইসি আতিবুর রহমান, শিক্ষিকা তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী ও জেলাপরিষদ সদস্যা শঙ্করী মন্ডল সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে পুরুষ মহিলা মিলিয়ে মোট পঞ্চাশ জন রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
অন্যদিকে করোনা আর লকডাউনের জেরে রক্ত না পেয়ে জেরবার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের দুই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর পরিবার। ওই দুই শিশুর পরিবার রক্ত পাওয়ার আশায় হাজীর হয়েছিলেন ক্যানিংয়ের সঞ্জয়পল্লী এলাকার রক্তদান শিবিরে। গোসাবা ব্লকের চন্ডিপুরের বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মণীষা বেরা ও আমতলির পুঁইজালি এলাকার নয় বছরের কৃষ্ণপদ মন্ডল থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতি মাসে মণীষা’র ‘ও পজিটিভ’ এক ইউনিট এবং কৃষ্ণপদ’র ‘বি পজিটিভ’ দু-ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। দুই শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই তাদের পরিবারের সদস্যদের। রক্তদান অনুষ্ঠানে দুই শিশু ও তাদের পরিবারের লোকজনদের করুণ পরিস্থিতি বুঝতে পারেন আয়োজকরা। তাঁরা ওই দুই পরিবারের দুই শিশুর কথা শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত বিধায়ক পরেশরাম দাসের সামনে আয়োজক সঞ্জয়পল্লী উন্নয়ণ সংস্থা দুই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্য এক বছর রক্ত দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে শপথ নেয়। এমন কি সংস্থার অন্যতম সদস্য কমলাকান্ত সাহা,দিবাকর সরদার,অভিজিৎ মন্ডল,বিনয় ভকত’রা চলতি বছরের জন্য ৩৬ জন রক্তদাতা জোগাড় করে দেয়। যারা প্রতি মাসে ওই দুই শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত দেবেন। সংস্থার এমন মানবিক উদ্যোগে খুশি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ওই দুই শিশুর পরিবার পরিজনেরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিধায়ক পরেশরাম দাস জানিয়েছেন “রক্তের বিকল্প কিছু তৈরী হয়নি। সঞ্জয়পল্লী উন্নয়ণ সংস্থা দুই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর রক্তের জোগান দেওয়ার জন্য যে শপথ নিয়েছে তা এক অনন্য অধাসারণ উদ্যোগ। আগামী দিনে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি ক্লাব ও সংস্থা যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে আগামী দিনে রক্তের জন্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত সহ অন্যান্যদের রক্ত সংকটে পড়তে হবে না।সকল কে এমন ভাবে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct