ফৈয়াজ আহমেদ: ৮ই আগস্ট ছিল বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়ার স্বাস্থ্যসেবায় থাকবে না বৈষম্য।’
থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের রক্তশূন্যতা, যা বংশগতভাবে বিস্তার লাভ করে। এতে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরির হার কমে যায়। তবে কতটা কমে, তা নির্ভর করে একটি বা দুটি জিনই খারাপ কি না তার ওপর।
শরীরের যেকোনো বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য দুটি জিন দায়ী। এর একটা আসে বাবা থেকে, আরেকটা মা থেকে। যদি হিমোগ্লোবিন তৈরির একটি জিন ভালো এবং একটি মন্দ থাকে তাহলে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের চেয়ে (১০-৫০ শতাংশ) কম তৈরি হয়। এ ধরনের রোগীকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর বলে। এদের মধ্যে রোগের লক্ষণ কম মাত্রায় প্রকাশ পায় ফলে রোগ সহজে ধরা যায় না। কারণ তারা ডাক্তারের কাছে দেরিতে আসে। তাদের থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা ক্যারিয়ার বলে। আর যাদের দুটি জিনই মন্দ অর্থাৎ যাদের মা ও বাবা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তাদের মধ্যে রোগের লক্ষণগুলো শিশুকালেই প্রকাশ পায় এবং সহজেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এদের থ্যালাসেমিয়া মেজর বা বিশেষ ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমেডিয়া বলে। এরা শিশুকাল থেকেই নানা সমস্যায় ভোগে।
এদের গঠন পদ্ধতিতে নানা রকম হতে পারে। যেমন Hb-E, HbC, Hb-D ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে এদের সংমিশ্রণও হতে পারে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাবা বা মা অথবা উভয়েই দায়ী। ভারতে হিমোগ্লোবিন ‘আইভিএস-আই-৫’ এবং হিমোগ্লোবিন আলফা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইটের প্রকোপ বেশি।
লক্ষণ
থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণগুলো নির্ভর করে রোগটা ক্যারিয়ার না রোগ তার ওপর। ক্যারিয়ারের বেলায় কমবেশি রক্তশূন্যতা থাকে। অনেক সময় হালকা জন্ডিসও থাকতে পারে। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া মেজর বা ইন্টারমেডিয়ার বেলায় রক্তশূন্যতা, জন্ডিস ও প্লীহা বড় থাকে। জন্ডিসের লক্ষণ থাকায় অনেকে লিভারের সমস্যা মনে করে। এ ছাড়া শিশুদের শরীর বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে ও ঘন ঘন ইনফেকশন হতে পারে। পিত্ত পাথর হওয়ার প্রবণতা থাকে। শরীরে অধিক পরিমাণে আয়রন জমা হয়ে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও লিভার সিরোসিসের মতো জটিলতা দেখা দেয়। ক্যারিয়ারদের বেলায় বেশি বেশি আয়রন গ্রহণের ফলে শরীরে অধিক আয়রন জমা হয়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া একজন ক্যারিয়ার না জেনে আরেকজন ক্যারিয়ারকে বিয়ে করলে তাদের সন্তানদের জীবনও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
চিকিৎসা
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল। তবে চিকিৎসার জন্য একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে ঘন ঘন ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও আয়রন চিলেশনের প্রয়োজন হয়। কিউরেটিভ চিকিৎসা হিসেবে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও জিন থেরাপি বেশ সন্তোষজনক।
প্রতিরোধে করণীয়
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে প্রায় ১-৩ শতাংশ লোক এই রোগের বাহক এবং ভবিষ্যতে তা আরো বৃদ্ধি পাবে যদি না আমরা সতর্ক হই।
রোগীদের প্রতি কিছু পরামর্শ হলো—
১. থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ, যা প্রতিরোধযোগ্য। তবে এই রোগের বাহকের সঙ্গে বিয়ে পরিহার করুন এবং বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিন।
২. একজন ক্যারিয়ার (ট্রেইট) অন্য একজন ক্যারিয়ারকে বিয়ে করবেন না।
মা ও বাবা উভয়েই ক্যারিয়ার হলে প্রিনেটাল ডায়াগনসিসের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আয়রন জাতীয় ওষুধ খাবেন না। অধিক আয়রনজনিত জটিলতা এড়ানোর জন্য তিন থেকে ছয় মাস পর পর রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct