মহাশয়া, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বৎসর পূর্তি আসন্ন। এই উপলক্ষে এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর উপেক্ষা ও অবহেলার কথা আপনার গোচরে আনতে চাই।
আমরা হেম (চন্দ্র দাস) কানুনগোর কথা বলছি। মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার অন্তর্ভুক্ত রাধানগর গ্রামের অধিবাসী তিনি (১৮৭১-১৯৫১)। বেলদা থেকে রাধানগর গ্রামের দূরত্ব ১৬ মাইল। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন প্রথম যৌবনে। বিপ্লবী গুপ্ত সংগঠনের সদস্য হন। সংস্পর্শে আসেন ভগিনী নিবেদিতা ও অরবিন্দ ঘোষের। জীবন-জীবিকার কথা কোনদিন ভাবেন নি তিনি। ভাবেননি নিজের কেরিয়ারের কথা; তাই আ্যকাডেমিক শিক্ষা, ডাক্তারিবিদ্যা, অথবা চিত্রাঙ্কন কোন কিছুই সম্পূর্ণ হয়নি। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ড্রয়িং শিক্ষকতা করে ছেড়ে দিয়েছেন, মেদিনীপুর কলেজে রসায়নের ডেমনেসট্রেটারের পদ ছেড়েছেন, ছেড়েছেন জেলা বোর্ডের চাকুরি। বিপ্লবস্পন্দিত যাঁর বুক, তাঁর কাছে নিজের জন্য বাঁচাটা অসম্ভব।
তাই ঘর-বাড়ি বেচে দিয়ে তিনি চলে গেলেন ইউরোপে বিপ্লবী আন্দোলনের রীতি-নীতি ও বোমা তৈরি শিখতে। বিদেশে মাদাম কামার অনুরোধে লাল, গেরুয়া ও সবুজ রঙের তেরঙা পতাকা তিনি তৈরি করেন। ১৯০৭ সালের ২২ আগস্ট প্রবাসী ভারতীয়দের সম্মেলনে সেই পতাকা উত্তোলন করেন মাদাম কামা। স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকার রূপকার হিসেবে পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বলতে হবে যে এর প্রথম রূপকার হেম কানুনগো। অথচ জাতীয় পতাকার ইতি্হাসে তিনি উপেক্ষিত। আবার তিনিই ভারতের প্রথম ব্যক্তি যিনি ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বোমা তৈরি করেছিলেন। তাঁর তৈরি যে তিনটি বোমা দিয়ে বৈপ্লবিক অভিযান শুরু হয় তার প্রথমটি চন্দননগরের মেয়র হত্যার জন্য, দ্বিতীয়টি কলকাতার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড হত্যার জন্য আর তৃতীয়টি জেলা জজ কিংসফোর্ড হত্যার জন্য।
১৯০৮ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি, আন্দামানের কারান্তরালে চলে যান, মুক্তি লাভ করেন ১৯২০ সালে। তারপর থেকে তিনি নিঃসঙ্গভাবে বাস করেছেন রাধানগরে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়, কিন্তু স্বাধীন দেশের নেতারা তাঁকে বিস্মৃত হয়েছিলেন।
আপনার কাছে আমাদের আবেদন :
১) রাধানগরের যে মাটির দোতলা বাড়িতে তিনি বাস করতেন, সেটি সরকার অধিগ্রহণ করুন এবং হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করুন।
২) সন্নিকটস্থ বেলদা স্টেশনটি তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হোক।
৩) তাঁর জন্মদিন নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে। কারো মতে ১২ জুন, আবার কারো মতে ৪ আগস্ট। উপযুক্ত গবেষণার দ্বারা সেই বিভ্রান্তু দূর করা হোক।
৪) তাঁর চিঠিপত্র ও চিত্রগুলি বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হোক।
৫) হেম কানুনগোর একটি পূর্ণাঙ্গ ও প্রামাণ্য জীবনী রচনা করা হোক।
গোপালপুর কলম সোসাইটির পক্ষে দিলীপ মজুমদার, অমর নস্কর, অনন্ত গায়েন
গোপালপুর, সরকারপুল, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ,৭০০ ১৪৩ ৮২৪০৯৭৯৫৫৪ amarnaskar09@gmail.com
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct