গল্পগুচ্ছ
শংকর সাহা
_________________
সেদিন বিকেল বেলায় বইয়ের সেল্ফ পরিষ্কার করতে করতে হঠাতই নীলাম্ভরীর নজরে এলো সুন্দর করে মলাটে মোড়ানো একটি বই রাখা। সাথে সাথে বইটি হাতে নিয়ে মলাট খুলতেই নজরে এলো এতো সেই রবি ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ যা একসময় তার বাবা কিনে দিয়েছিলেন। বহুদিন বাদে হাতে বইটি পেয়ে যেন নীলাম্ভরীর সেই সব দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন মন্মথবাবু। নীলাম্ভরী তাহার একমাত্র কন্যা। মেয়েকে নিজেরই আদর্শে বড় করে তুলেছিলেন তিনি । মেয়েকে বলতেন জীবনে বইকে যেন সারাজীবনের সঙ্গী করে রাখে সে। বাবার কথাগুলো আজ নীলাম্ভরীর খুব মনে পড়ে।
এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পরে এ পৃথিবীটি সম্পূর্ণ যেন অচেনা লাগে তার। এখানে যেন তার মূল্যবোধ ও ইচ্ছে নিয়ে কেউ কোনোদিন ভাবেনা। বিয়ে হয়ে আসার তিনদিন পর থেকেই রান্না ঘরটিই যেন তার ঠিকানা হয়ে হয়ে। পড়াশোনায় নিজে বরাবর ভালো হলেও পোস্ট গ্রাজুয়েট আর পড়া হয়ে উঠেনি তার। শাশুড়ী মা শুনিয়ে শুনিয়ে তাকে বলতেন,মেয়েদের ওতো বিদ্দ্যে নিয়েই কি হবে? শেষে সেই হেঁসেলই তো টানতে হবে তাকে।বই পড়ার স্বপ্নগুলো আজ যেন শ্বশুর বাড়িতে এসে সকলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তা হারিয়ে গেছে।
নীলাম্ভরীর খুব মনে পড়ছে যে বার কলেজে বটানি ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিল সে সেইবার এই গল্পগুচ্ছ বাবা কিনে দিয়েছিলেন তাকে। টিফিনের পয়সা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে বইমেলায় বই কিনত সে। আজ সবটাই তেমন যেন স্মৃতি হয়ে ফিরে আসছে তার চোখে। গল্পগুচ্ছের পাতাগুলো উল্টোতে উল্টোতে বাবার কথাগুলো খুব মনে পড়ছে তার।বাবা বলতেন যে,”গল্পগুচ্ছ যেন জীবনের কথা বলে ।কখনো কষ্ট পেলে যেন এই গল্পগুলো যেন বাঁচার প্রেরণা হয়ে ওঠে।“ নীলাম্ভরীর দুইচোখ অশ্রু সজল হয়ে ওঠে। জানালার পাশ দিয়ে একভাবে বাইরের প্রকৃতির দিকে চেয়ে থাকে সে।বাইরের চেনা জগতটিকে তার কাছে আজ বড়ই স্বার্থপর লাগে তার....
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct