প্রিন্স বিশ্বাস: সূচনা : ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক অনলাইন গেমে ঝুঁকেছে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র যুবকেরা, অজান্তেই তারা শিকার হচ্ছে মরণ নেশায়। Covid পরিস্থিতিতে দৈর্ঘ সময় স্কুল,কলেজ সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন ৬ থেকে ১৪ বা ২১ বছর বয়সের সকল শিক্ষার্থীরা। অনেক বাবা মায়েরা না চাইলেও এই সময় তার সন্তানদের (অনলাইন নামক ক্লাসের অজুহাতে) Android mobile phone কিনে দিতে বাধ্য হয়েছে, সেই সঙ্গে রিচার্জ করে দিচ্ছে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের নেট প্যাক। আর এই সুযোগে দিন দিন ইন্টারনেট ফাইটিং ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমে ঝুঁকছে কিশোর যুব সমাজ। জানা যায় চীনের এক গেম প্রস্তুতকারক সংস্থা ২০১৯ সালে তৈরি করে যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও গেমটির মতোই তরুণ প্রজন্মের কাছে যা আশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে। করোনায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অলস সময়ে এ গেমসে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর যুব সমাজ।মূলত উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা ও পুরো যুব সমাজ দিন দিন ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক গেমের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা নিয়মিত পড়া লেখা সহ শিক্ষা পাঠ গ্রহণ নিয়ে ও খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে জড়িয়ে পড়ে নেশায় পরিণত করছেন। ৮ বছর থেকে ২১ বছরের উঠতি বয়সের যুবকরা প্রতিনিয়ত অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে এসব গেইমে আসক্ত হচ্ছে। এমন কি মাঝে মধ্যে দেখা য়ায় বেশ কয়েকজন মিলে এই গেমের ট্রুনামেন্টের আয়োজন করতে। এই সব বিদেশী গেম থেকে শিক্ষার্থী বা তরুণ প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাবে সমাজ ব্যাবস্তায়। শুধু খেলায় ক্ষান্ত হয়েই থাকে না এরা ইউসি ক্রয় ও ডায়মন্ড টপ আপের নামে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, পাবজি ও ফ্রি ফায়ার নামক মরন গেমস। এই ভাবে অজানা বিদেশি কোম্পানি হাতিয়ে নিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা। একজন অসচ্ছল পরিবারের সন্তান ডায়মন্ড ও ইউসি কেনার টাকা যোগান দিতে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপকর্মে। মাদক বিক্রয় ও কিছু টাকার বিনিময়ে মাদক সেবিদের কাছে মাদক পৌছে দেওয়া তার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম। একসময় যে সকল শিশুরা ১০ টাকা / ২০ টাকা জমিয়ে যেখানে ক্রিকেট বল ফুটবল কিনত, সেখানে তারা টাকা জমিয়ে রাখছে ইউসি / ডায়মন্ড কেনার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফ্রি ফায়ার গেমে অনুরাগীরা জানান, ‘প্রথমে তাদের কাছে ফ্রি ফায়ার গেম ভালো লাগত না। কিছুদিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন তারা আসক্ত হয়ে গেছে। এখন গেম না খেললে তাদের অস্বস্তিকর মনে হয় বলে জানায় । আরেক জন ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জানায়, ‘সে আগে গেম সম্পর্কে কিছু জানত না। এখন নিয়মিত ফ্রি ফায়ার গেম খেলে। মাঝে মধ্যে গেম খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার ইচ্ছাও হয় তার। সে আরো বলে, ফ্রি ফায়ার গেম যে একবার খেলবে সে আর ছাড়তে পারবে না বলে দাবি করে। এই ধরনের ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক গেম মাদকদ্রব্যর নেশার মত ভয়ঙ্কর। আমাদের শৈশবে আমরা অবসর সময়টি বিভিন্ন খেলা ধুলার মধ্যে দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার প্রজন্ম সন্তানদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। শহরতলি ছাড়িয়ে এখন জেলার গ্রাম-গঞ্জে মোবাইল ইন্টারনেটে ‘গ্রুপ গেম’ মহামারী আকার ধারণ করেছে।
শিক্ষার্থীরা অনেকে পড়ার টেবিল ছেড়ে খেলছে মোবাইল গেম, আবার কখনো ইন্টারনেটের খারাপ সাইটে বিভিন্ন ছবি দেখছে। এতে একদিকে তাদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। গবেষনায় প্রমানিত এসব গেম শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। গেমে জিততে না পেরে সারাদিন ডিপ্রেশনে থাকা, বা ডিপ্রেশন থেকে সুইসাইড ও পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
এটা আচরণগত আসক্তি:
যদিও গেম আসক্তি বিষয়টি ইন্টারনেট আসক্তি থেকে খানিকটা আলাদা। কখনো দেখা যায় ইন্টারনেটে কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে গেম খেলছে, কেউ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, কেউবা নানা সফটওয়্যার বা এসব নিয়ে মশগুল আর কেউবা ফেসবুকসহ নানান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করছে দিনের বেশির ভাগ সময়। মোটকথা সবই হচ্ছে ননকেমিক্যাল অ্যাডিকশন বা আচরণজনিত আসক্তি। বিশ্বজুড়ে এই বিষয়ে প্রকাশিত ১৬টি গবেষণাপত্রের অ্যানালাইসিস করে দেখা গেছে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ৪.৬ % ইন্টারনেট গেমিংয়ে আসক্তিতে ভুগছে। যাদের মধ্যে ৬.৮% হচ্ছে কিশোর আর ১.৩% শতাংশ কিশোরী (জে ওয়াই ফ্যাম, ২০১৮)।
নিষিদ্ধ বিষয় নয়, তবে ক্ষতিকর:
ইন্টারনেট গেম খেলা নিষিদ্ধ নয় অধিকাংশ দেশে এমন কি আমাদের ভরতবর্ষেও নিষিদ্ধ নয়। এর ক্ষতিকর, অযৌক্তিক, অপরিমিত ব্যবহার চিন্তা আর আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। এই ইন্টারনেটের ব্যবহার বা গেম খেলার বিষয়টি যখন তার চিন্তা আর আচরণের ওপর খারাপ ধরনের প্রভাব ফেলবে, সামাজিক দক্ষতা কমিয়ে দেবে বা দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান খারাপ করে দেবে তখন তা আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।
যেভাবে বাড়ে আসক্তির প্রবণতা:
সন্তানকে শান্ত রাখতে মুঠোফোনসহ নানা যন্ত্রপাতি তাদের হাতে তুলে দেন ব্যস্ত মা–বাবারা। তাঁরা নিজেরাও মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে সন্তানকে সব সময় নিজের চোখের সামনে দেখতে চান মা-বাবা। সে ক্ষেত্রে তাদের হাতে মুঠোফোন-ল্যাপটপ তুলে দিয়ে আপাতত স্বস্তি অনুভব করেন, যা শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেটে আসক্ত করে ফেলে। বাবা-মা নিজেরাও যদি সারা দিন ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মগ্ন থাকেন তাহলেও সন্তানের মধ্যে আসক্তির প্রবণতা বেড়ে যায়।
কখন আসক্তি বলব:
ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই সেটাকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। দেখতে হবে সেটি আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে কিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য গবেষণা দলের মতে, গেমিং আসক্তির লক্ষণগুলো ১২ মাস ধরে থাকতে হবে। তবে লক্ষণ যদি গুরুতর ধরনের হয় তবে সেগুলো অল্প দিন ধরে লক্ষণ দেখা দিলে সেটাকেও গেমিং ডিজঅর্ডার বলা যাবে। কিছু লক্ষণ, ইন্টারনেট ব্যবহার বা গেম খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অর্থাৎ ঘন ঘন খেলতে থাকবে, অনেক বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এবং এত নিবিষ্টভাবে সেটিতে মগ্ন থাকবে যে চারপাশের অনেক কিছু তার মনোযোগ পাবে না।
১. দিনের শুরুই হবে ইন্টারনেট ব্যবহার বা গেম খেলার আকুতি দিয়ে, তীব্র আকাক্ষ্মা থাকবে গেম বা ইন্টারনেটের প্রতি। নতুন কিছুর চেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকেই জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে করবে।
২. দিন দিন ইন্টারনেটে গেম খেলার সময় বাড়তে থাকবে। যেমন আগে সপ্তাহে দুই দিন খেলত, এখন প্রায় প্রতিদিনই খেলে। আগে দিনে ১ ঘণ্টা কাটাত ইন্টারনেটে বা গেমে, এখন ৬ ঘণ্টা ব্যয় করে। চাইলেও নিজেকে গেম খেলা থেকে বিরত রাখতে পারে না।
৩. জীবনের সব আনন্দের উৎস হবে ইন্টারনেট বা গেম। এগুলো ছাড়া সে আর কোনো কিছুতেই আনন্দ পাবে না।
৪. যে কাজগুলো করার কথা, যেমন: পড়ালেখা, অফিস, বাড়ির কাজ সবকিছু ব্যাহত হবে। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে থাকবে। কাজের মান কমে যাবে। অফিসে দেরিতে যাবে।
৫. নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে উৎকণ্ঠা আর অস্বস্তিতে ভুগবে। খিটখিটে মেজাজ হবে। মন খারাপ লাগবে। আচরণ আগ্রাসী হয়ে উঠবে। দেখা যাবে কোনো কারণে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাতে সে অস্থির হয়ে পড়ছে, রাগ করছে, চিৎকার করছে, ভাঙচুর করছে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠছে।
৬. ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে। দিনে ঘুমাবে আর রাতে জাগবে।
৭. খাবার গ্রহণে অনিয়মিত হয়ে উঠবে। তাড়াতাড়ি খাওয়া যায় এমন খাওয়া গ্রহণ করবে, যেমন ফাস্টফুড। অর্থাৎ সময় নিয়ে খাবে না। বাসায় সবার সঙ্গে টেবিলে বসে না খেয়ে নিজের ঘরে বসে খাবে।
৮. মিথ্যা কথা বলবে। নিজের ত্রুটিগুলো ঢাকতে তথ্য গোপন করবে। স্কুল ফাঁকি দেবে বা ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কখনো ক্লসে ঝিমুবে।
৯. বাথরুমে বেশি সময় কাটাবে, বাথরুমে মুঠোফোন নিয়ে যাবে।
১০. সামাজিকতা কমে যাবে। কারও সঙ্গে মিশবে না। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।চারপাশ ভুলে গিয়ে গেমে মগ্ন হওয়া গেমে আসক্তির লক্ষণ।
আসক্তির পরিণতি কী ?
মূলত ইন্টারনেট গেম আসক্তি অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের (ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, মদ ইত্যাদি) আসক্তির মতোই। পার্থক্য হচ্ছে এটি আচরণগত আসক্তি, আর অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের আসক্তি, রাসায়নিক আসক্তি। মস্তিষ্কের যে অংশে (রিওয়ার্ড সেন্টার) ইয়াবা বা গাঁজার মতো বস্তুর প্রতি আসক্তি জন্ম নেয় ঠিক সেই অংশেই কিন্তু ইন্টারনেট বা গেমের প্রতি আসক্তি জন্মায়। তাই একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
আসক্তির পরিণতি হচ্ছে—
১১. পারিবারিক জীবন বাধাগ্রস্ত হবে। বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে। সামাজিক সম্পর্কগুলোর মূল্য কমতে থাকবে।
১২. সামাজিক দক্ষতা কমে যাবে। সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করার কারণে নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে।
১৩. ব্যক্তিগত জীবন বাধাগ্রস্ত হবে। নিজের যত্ন কম হবে। অপুষ্টিতে ভুগবে, কারণ উপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করবে না। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হলে স্বাভাবিক যৌনজীবন নষ্ট হবে।
১৪. পড়ালেখা ও কর্মজীবনের মান কমে যাবে। মানসিক রোগও হতে পারে।
১৫. কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গেমিং ডিজঅর্ডারের সঙ্গে অতি উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং তীব্র মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের সঙ্গে গেমিং ডিজঅর্ডার হওয়ার প্রবণতা কখনো বেশি পাওয়া গেছে।
এইধরনের গেম গুলিতে আসক্ত হয়ে, ইতিমধ্যে দেশে বহু কিশোরের আত্নহত্যার খবর এসেছে। মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছে বহু তরুণ। শরীরে বিষাক্ত টক্সিন জমা হতে হতে, শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করছে না অনেকেরই। হজমের সমস্যায় ভুগছে বহু কিশোর। মানসিক অবসাদে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে! লালাগ্রন্থির নিঃসরণের ছন্দও হারিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যনালীতে পর্যাপ্ত মিউকাস আসছে না। ফলে খাদ্য গলা দিয়ে নামতেও চাইছে না। খাদ্যনালীর পেরিষ্টোলিসিস মুভমেন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারাদিন মোবাইল নিয়ে ঘরে বসে এই গেম খেলার ফলে মাঠে খেলাধূলা বা শরীরচর্চাও উঠে গেছে পুরোপুরি। লেখাপড়ার বারোটাতো বেজেইছে। মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাতে সঠিক সময়ে না ঘুমিয়ে নেশার কবলে পড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে রাত দু-টো-আড়াইটে পর্যন্ত চলছে এই খেলা। ফেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘুমও! গোলাগুলি নিয়ে খেলার ফলে শিশুদের মধ্যে হিংস্রতাও তৈরী হয়ে যাচ্ছে। মানবিক অনুভূতি মূলক গুণাবলী একেবারে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরকমটা চলতে থাকলে আগামী দিনে দেশের সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীতেও যোগ্য ছেলেদের পাওয়া যাবে না। নেশার প্রকৃতি এতটাই তীব্র, যে বাবা-মা নিষেধ করলে বা ঐ অনলাইন গেম থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করলেও সন্তান বেছে নিতে পারে আত্নহননের পথ। তাই অভিভাবকরাও নিরূপায় হয়ে পড়ছেন। এমনকি এইসব রোগের তেমন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও এখনো বের হয় নি! এমন অবস্থায় দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম বিপন্ন।
প্রতিরোধের উপায় :
১৬. ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত না হলে, ইন্টারনেট সংযোগ বা ব্যক্তিগত মুঠোফোন নয়। সে নিজেকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, তা আগে বিবেচনা করতে হবে।।
১৭. সন্তানদের গ্যাজেট আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিলে তার একটি সময়সীমা বেঁধে দিন। সন্তানের সঙ্গে চুক্তিতে আসুন, যাতে নিয়মগুলো পালন করে। সময় মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।
১৮. শিশু কিশোররা যাতে আপনার সামনে মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করে, সেদিকে গুরুত্ব দিন।
১৯. নিরাপত্তামূলক অনেক সফটওয়্যার আছে। সেগুলো ব্যবহার করুন, যাতে আপনার বাসার সংযোগ থেকে কোনো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা না যায়। এ বিষয়ে আপনার ইন্টারনেট সংযোগদাতা বা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। সন্তান প্রযুক্তিতে অতি দক্ষ এই ভেবে আত্মতৃপ্তি পাবেন না। তার বয়সটি প্রযুক্তির উপযোগী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
২০. শিশুকে গুণগত সময় দিন। মা-বাবা নিজেরাও যদি প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত থাকেন, তবে সবার আগে নিজের আসক্তি দূর করুন। পরিবারের সবাই মিলে বাসায় ক্যারম, লুডু, দাবা, মনোপলি ইত্যাদি খেলার চর্চা করুন। নিয়ম করে সবাই মিলে বেড়াতে যান। মাঠের খেলার প্রতি উৎসাহ দিন।
২১. ইন্টারনেট বা গেম আসক্তি কিন্তু মাদকাসক্তির মতোই একটি সমস্যা। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে এই আসক্তি দূর করুন।
উপসংহার:
এই অনলাইন গেমগুলিতে যে নেশা হয়, তার ফলে মোবাইলে ডাটা প্যাক রিচার্জ করা বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। এই অনলাইন গেম গুলিতে প্রচুর ডাটা-র আদান প্রদানও হয়। ফলে পুঁজিপতিদের ব্যবসার সুবিধা হয়। এই গেম বন্ধ করলে তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থক্ষুন্ন হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের nternational lassification of Disease বা আইসিডি’এর ১১তম সংস্করণে ভিডিও কিংবা অনলাইন গেমকে গুরুতর মানসিক অসুস্থতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি বলছে, কম্পিউটার বা ট্যাবে অনলাইন গেমের কু-অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্কের কোষে কিছু রাসায়নিক নির্গত হয়। যা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সেটি ক্ষতিকর না হলেও দীর্ঘ দিনের অভ্যাসের ফলে একধরনের মানসিক নেশা তৈরি হয়। যা ব্যবহার, মনোসংযোগ এবং দিনের কাজকর্মে প্রভাব ফেলে। সংস্থার মতে, এই পরিবর্তনই গেমিং ডিসঅর্ডার সমস্যার মূল কারণ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছুটা তরতাজা হওয়ার জন্য খেললেই যে এমন অসুস্থতা আসবে তা কিন্তু নয়। তবে তা সীমা লঙ্ঘন করলেই সমস্যা। এটি অন্যান্য নেশার মতোই মনের জন্য ক্ষতিকর। তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই অনলাইন গেম’এ রাশ টানা উচিৎ।(মতামত ব্যক্তিগত)।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct