আপনজন ডেস্ক: একদিন আগে সোনা জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ভারতীয় বক্সিং তারকা বজরং পুনিয়া। কিন্তু শনিবার ভারতীয়দের স্বপ্ন সার্থক করলেন হরিয়ানার কৃষক সন্তান নীরজ চোপড়া। টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভলিন থ্রোতে অবশেষে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করলেন সোনা জিতে। ফলে অলিম্পিকের ইতিহাসে সোনা পাওয়ার সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁেছ হয়ে গেল ১০। আর সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস পড়লেন হরিয়ানার কৃষক সন্তান নীরজ।
নীরজের ইতিহাস সৃষ্টিতে প্রধানমন্দ্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসিয়ে দেন নীরজকে।
এর আগে ভারতের যত সোনা এসেছে তার বেশিরভাগই হকিতে। এবছর হকিতে সোনা না জিতলেও ব্রোঞ্জ পেয়েছে চার দশকের খরা কেটেছে। তবুও দেশের হয়ে হকিতে আটটি সোনা এসেছে অলিম্পিকে। আর এর আগে একমাত্র ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জেতার রেকর্ড ছিল শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রার। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে অভিনব বিন্দ্রার সোনা জয়ের ১৩ বছর পর ফের আর এক ভারতীয় ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন নীরজ। তবে, জ্যাভলিন থ্রোতে।
শনিবারের আগে পর্যন্ত অলিম্পিক্সে মাত্র ৯টি সোনা ছিল ভারতের। এর মধ্যে আটটি ছিল হকিতে। ব্যক্তিগত বিভাগে মাত্র একটি সোনা ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে শুটিংয়ে জিতেছিলেন অভিনব বিন্দ্রা। এর পর বার বার তিনি আক্ষেপ করেছেন ব্যক্তিগত বিভাগে কেউ সোনা না জেতায়। সেই স্থান পূরণ করলেন নীরজ। দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন তিনি।
হরিয়ানারর খান্দ্রা গ্রাম থেকে উঠে আসা নীরজ এদিন জ্যাভলিনের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন । প্রথম প্রচেষ্টায় ৮৭.০৩ মিটার ছুড়ে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যান। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় দূরত্ব আরও বাড়িয়ে নেন তিনি। এ বার ছোড়েন ৮৭.৫৮ মিটার। হাত থেকে জ্যাভলিন বেরনো মাত্রই পিছনের গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে উল্লাস করতে থাকেন নীরজ। সেখানে বসেছিলেন তাঁর কোচ উয়ে হন এবং ভারতীয় দলের আধিকারিকরা।
চিন্তা ছিল জার্মানির জোহানেস ভেটারকে নিয়ে। কিন্তু ফাইনালে প্রথম তিন প্রচেষ্টার পরেই তিনি ছিটকে যান। লড়াইটা মূলত ছিল চেক প্রজাতন্ত্রের দুই থ্রোয়ারের সঙ্গে নীরজের। কিন্তু দু’জনেই শেষ দুটি থ্রোয়ে ফাউল করে বসেন। ফলে নিজের ষষ্ঠ থ্রোয়ের আগেই সোনা জিতে যান নীরজ।
এই জয় নীরজ উৎসর্গ করেন কিংবদন্তী অ্যাথলেট মিলকা সিংকে। নীরজ চোপড়ার জন্ম ১৯৯৭ সালে ২৪ ডিসেম্বর, হরিয়ানার খান্দ্রায়। ছোটবেলায় কার্যত পেটুক বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। বিরাট চেহারার নীরজকে তার এক কাকা পানজাপটের শিবাজি স্টেডিয়ামে নিয়ে যান জ্যাভলিন থ্রোয়ের প্রশিক্ষণের জন্য। ২০১১ সালে জগিং করার সময় নজরে পড়েন আর এক পেশাদার জ্যাভলিন থ্রোয়ার তথা কোচ জয়বীর। বাড়ি থেকে প্রায় ১৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই শিবাজি স্টেডিয়াম থেকেই তার এগিয়ে চলা শুরু হয়। এরপর তিনি সাই-তে যোগ দেন। পানিপথ সাই সেন্টারে নীরজকে জ্যাভলিনের প্রাথমিক পাঠ দেন জয়বীর। তিনি বলেন, ‘ওজন কমানোর জন্য মাঠে তখন আসন নীরজ। একদিন ওকে আমি বলি, জ্যাভলিন থ্রো করো। ও করে । আর আমি দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রশিক্ষণ ছাড়া সেদিন ও এত ভালো থ্রো করেছিল যে, আমি ওকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি।’ বিগত ৫ বছরে একাধিক পদক জিতেছেন নীরজ। ২০১৮ সালে জাকার্তায় কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন নীরজ। অবশেষে টোকিও অলিম্পিকে ভারতের হয়ে সোনা জিতে রেকর্ড গড়লেন এই অ্যাথলেট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct