আপনজন ডেস্ক: বিভিন্ন রাজ্যে ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধে আইন চালু হচ্ছে। আর তার ফলে অনেক সময় সংখ্যালঘু তরুণরা তার নিশানা হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডে মুসলিম সমাজের উদ্দেশ্যে বিশেষ সতর্ক বাণী জারি করল। সেই সঙ্গে ভিন ধর্মে বিয়ের ব্যাপারে নিজেদের সংযত থাকার অথবা এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড বলেছে, মুসলিম সম্প্রদায়কে অমুসলিমদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া উচিত। যদিও একজন মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিবাহ “অবৈধ” এবং “দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছে বোর্ড। এই বিবাহ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড- এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি আন্তঃধর্মীয় বিয়ে বন্ধে দেশব্যাপী পিতা-মাতা, অভিভাবক, মসজিদ এবং মাদ্রাসার প্রতিনিধিদের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা তুলে ধরেন।
মাওলানা রহমানি সাংবাদিকদের বলেন, একজন মুসলিম এবং একজন অমুসলিমের মধ্যে বিবাহকে অবৈধ বলে মনে করা হয়, যদিও তা সামাজিক মানদণ্ড বিচারে বৈধ বলে গণ্য হয়। কিন্তু এটি এটি শরিয়ার নিয়ম অনুসারে বৈধ বলে বিবেচিত হয় না। বোর্ডের তরফে আরও বলা হয়, একসঙ্গে করার পরিবেশ, পিতামাতার লালন-পালন এবং ধর্মীয় শিক্ষার অভাবের কারণে এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয় যার ফলে অনেক মুসলিম অমুসলিমদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে।
তবে, অস্বীকার করার উপায় নেই এখন বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম ছেলে ও অমুসলিম মেয়ের সঙ্গে বিয়ে কিছু কট্টর সংগঠনের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। তার ফলে, উত্তরপ্রদেশে, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে মুসলিমদের সঙ্গে অমুসলিমদের বিয়ে বা কথিত ‘লাভ জিহাদ. ঠেকানোর নামে ধর্মান্তর বিল চালু করা হয়েছে।
এই আইনে অনেক সময় নিরীহ সংখ্যালুঘরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে ঘটনা সমানে আসছে। এই ধরনের ঘটনা সমগ্র সংখ্যালঘূ সমাজকে আতঙ্কিত করে তুলছে। তাই সেই পরিস্থিতিতে আন্তঃধর্মীয় বিয়ে নিয়ে অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের বিয়ে সম্পর্কিত নির্দেশনামা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিয়ে সম্পর্কিত এই নির্দেশিকা জারি করার কারণ দেখিয়ে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি দাবি করেন, এই বিষয়টিতে পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য ছিল। কারণ অনেক মুসলিম মেয়ে অমুসলিম ছেলেদের সাথে চলে গিয়েছিল কিন্তু পরে তাদের কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বা তাদের জীবন হারাতে হয়েছিল।
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সাত দফা নির্দেশনায় বোর্ড বলেছে, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক থাকা এবং তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে মেয়েদের সহশিক্ষামূলক স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
মুসলিম পিতামাতাদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে অযথা বিলম্ব না করেন। দেরিতে বিয়ে দিলে অনেক সময় এই ধরনের সমস্যাগুলির জন্ম দেয়। বিবাহকে সহজভাবে ওনয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে আরও বলা হয় যে, শুক্রবারে মসজিদে খুতবা বা ইমামের ধর্মোপদেশ গ্রহণ যেন গ্রহণ করা হয় এবং আলেমদেরকে নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ সংক্রান্ত ধর্মীয় শিক্ষার উপর আলোচনা সভা করা হয়।
পার্সোনাল ল’ বোর্ডের নির্দেশ নামায় আরও বলা হয়েছে, সাধারণত যখন এই ধরনের বিয়ে হয়, তখন তাদের নাম সহ বিবাহ রেজিস্ট্রি অফিসে নথিভুক্ত হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, সমাজকর্মী, মাদ্রাসা শিক্ষক এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল নাগরিকদের উচিত এই সব তরুণদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা। তারা যেন আবেগের বশে এমনটা না করে। কারণ ক্ষণস্থায়ী আবেগের কারণে এই ধরনের বিয়ে হলেও পরে তা ভেঙে যাচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct