বন্ধু
শংকর সাহা
_____________________
সেদিন স্কুল থেকে ফটিকের ফিরতে বেশ দেরী হয়। এইদিকে ছেলের আসতে দেরী দেখে
ঘর-বাহির করছে শোভা। স্বামী হারানোর পরে এই ফটিকই তার বেঁচে থাকার
একমাত্র সম্বল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। এপাড়ায় গজ্ঞের মাঠে তখন প্রায়
সমস্ত দোকানও বসে গেছে। অপরাহ্নের আলো পড়তেই বাড়ির দরজার সামনে এসে ফটিক
মা মা বলে ডাকতে থাকে। রান্না ঘর থেকে বের হতেই শোভার নজরে আসে ফটিকের পা
থেকে রক্ত পড়ছে। “পায়ে জুতো কই ফটিক? আর কোথায় ছিলিস এতোক্ষণ?
“মা,স্কুলেই আমার জুতো ছিঁড়ে গেছে। ভাঙ্গা ইটের রাস্তা দিয়ে আসতে খুব যে
কষ্ট হয়েছে আজ। জুতো বোধ হয় আর সেলাই হবেনা। চারটে পটি মারা ছিল ।সেগুলো
ও ছিঁড়ে গেছে।” “আয় বোস! ইস খুব কষ্ট হচছে তাইনা বাবা?”
মাসেরও শেষ।হাতে তেমন টাকাও নেই ।বড়বাবুকে বলে কিছু
টাকা ধার দিলে তোকে কালই জুতো কিনে দেবো “ পরের দিন ফটিক স্কুলে আসেনা।
স্কুলে ফটিককে না দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায় অর্ক। অর্ক, ফটিকের প্রিয়
বন্ধু। অর্ক গ্রামের জমিদারের নাতি হলেও মানুষকে বড়ই ভালোবাসে। তাই
ফটিকের মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে জেনেও তাকেই সে প্রিয় বন্ধু বানিয়েছে।
যেদিন টিফিনে অর্ক ফটিককে আমসত্বের কথা জিজ্ঞাসা করলে ফটিক হেসে বলে
কোনোদিন সে আমসত্বের নামই শোনেনি আর তার কেমন স্বাদ তাও সে জানেনা। অর্ক
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফটিকের দিকে আর মনে মনে বলে, “আমাদের বাড়িতে এতো
আমসত্ব আর ফটিক.....” পাশের বন্ধুর কাছ থেকে অর্ক জানতে পারে জুতো ছিঁড়ে
যাওয়ায় ফটিক আজ স্কুলে আসেনি।
সেদিন বাড়ি ফিরে অর্ক তেমন কারো সাথে কথা বলেনা। একমনে
বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে ফটিকের কথা। সেদিন স্কুলে আসার সময়ে
টিফিনবক্সে বেশি বেশি করে আমসত্ব ঢুকিয়ে নেয় অর্ক। স্কুলে বেরোনোর সময়ে
সিঁড়ির নীচে রাখা নিজের সারি সারি জুতো গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । হঠাতই
মাকে বলে,” মা এই জুতো গুলো পুরোনো হয়ে গেছে। আমি স্কুলে যাবার পথে নিয়ে
যাই। রাস্তার ঔই ছেলেটাকে দেবো। “ সেদিনও অর্কের বানানো কথাগুলো তার মা
বুঝতে পারে। আগেও এমন করে ফটিককে দেবে বলে অনেক কিছুই মিথ্যে বলে নিয়ে
গেছে। অর্কের দিকে চেয়ে তিনি বলেন, “ ফটিককে দিবি জুতো তাইনা অর্ক? ওকে
খুব ভালোবাসিস তাইনা ? সেদিন অর্ক নিজেকে লুকিয়ে রাখেনি। মাকে জড়িয়ে বলে,
“মা,ফটিক যে খুব গরীব।ওর যে বাবাও নেই..” অর্কের চোখের কোণে তখন বিন্দু
বিন্দু জল । বাইরে তখন স্কুলের গাড়ি দাঁড়িয়ে। কাজের মেয়েটি এসে বলে,
“ছোটোবাবু ,ইস্কুলের গাড়ি এসেছে..”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct