ক্যান্সার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সারকোমা ক্যান্সার। সারকোমা অন্যান্য সকল ক্যান্সারের মতনই, কিন্তু প্রাথমিকভাবে এটি সনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। অন্য দিকে, এটি যদি মেটাস্ট্যাটিক স্টেজে সনাক্ত করা হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ফৈয়াজ আহমেদ......
__________
বর্তমান যুগে ক্যান্সার বহুল চর্চিত একটি রোগ। ক্যান্সার রোগ শুনলেই একটা আতঙ্ক অনুভব হয়। কিন্তু সারকোমা ক্যান্সার এটি হয়ত অনেকে না শুনে থাকতে পারেন। কিন্তু, এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে অনেক বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, এতে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৫২৭০ জন মানুষ মৃত্যু বরণ করে এবং ১.৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র ১২৭৫০ জনের ক্ষেত্রে এটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এধরণের ক্যান্সারের ব্যাপারে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জুলাই মাসটিকে সারকোমা মাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আজকে এই বিষয়ে জানাবো আপনাদের।
বিরল ও ভিন্ন ধরনের ক্যানসার সারকোমা। এটি প্রধানত হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়, মাংসপেশি, নার্ভ, রক্তনালি ইত্যাদি স্থান থেকে উৎপত্তি হয়। সারকোমার নানা ধরন রয়েছে। তবে এর প্রধান দুটি ধরন হলো বোন সারকোমা বা অস্টিওসারকোমা ও সফট টিস্যু সারকোমা। ঠিক কী কারণে সারকোমা হয়, তা বলা কঠিন। তবে পারিবারিক বা জিনগত রোগ সারকোমার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সফট টিস্যু সারকোমা শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। শুরুতে শুধু ব্যথাবিহীন চাকা বা দলা নিয়ে প্রকাশ পায়। চাকাটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা যখন আশপাশের মাংসপেশি বা নার্ভকে চাপ প্রয়োগ করে, তখন অস্বস্তি বা ব্যথার সৃষ্টি হয়। লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত একে শনাক্ত করা কঠিন। তাই এ ধরনের ক্যানসার সাধারণত শরীরে অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর ধরা পড়ে। অন্যদিকে অস্টিওসারকোমা যেহেতু হাড়ে হয়, তাই প্রথম থেকেই হাড়ে ফোলা, ব্যথা অনুভূত ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এই ক্যানসার।
অন্যান্য ক্যানসারের মতোই সারকোমা রোগনির্ণয় নিশ্চিত করতে ‘বায়োপসি পরীক্ষার’ কোনো বিকল্প নেই। তবে অনেক সময় শুধু বায়োপসি দিয়েও সারকোমার প্রকৃত ধরন নির্ধারণ সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ‘ইমুনোহিসটোকেমিস্ট্রির’ মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। রোগ শনাক্ত ও নিশ্চিত হওয়ার পর আরও কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নির্ধারণ করা হয়।
অস্ত্রোপচার সারকোমার চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত জায়গাসহ আশপাশের স্বাভাবিক টিস্যু খানিকটা কেটে ফেলা হয়।
সারকোমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপির ভূমিকাও যথেষ্ট। এই রেডিওথেরাপি অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে দেওয়া হয়। অনেক সময় টিউমারের আকার বড় হলে, আগে রেডিওথেরাপি দেওয়ার মাধ্যমে টিউমার ছোট করে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। আবার শুরুতেই অস্ত্রোপচার করা হলে পরে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এ ছাড়া কেমোথেরাপি, ইমুনোথেরাপিও সারকোমা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সর্বোপরি অন্যান্য ক্যানসারের মতো সারকোমারও পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসার কখন কোনটা দিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সারকোমা চিকিৎসা-পরবর্তী ফল ভালো আশা করা যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct