আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে আদালতে আদালতে মামলা চলছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে জ্ঞানবাপী মসজিদ কর্তৃপক্ষ কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডর নির্মাণের জন্য ১৭০০ স্কোয়ার ফুট জমি মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিল। তার পরিবর্তে তারা মাত্র এক হাজার স্কোয়ার ফুট জমি পেল মন্দিরের তরফ থেকে। জানা গেছে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের মধ্যে তিনটি প্লট রয়েছে মসজিদ কমিটির। কিন্তু মন্দিরের চলাচলের স্বার্থে তারা মন্দির কর্তৃপক্ষের সুবিধার্থে এগিয়ে এসে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করল।
এ ব্যাপারে জ্ঞানবাপী মসজিদের ম্যানেজিং কমিটি আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি এস এম ইয়াসিন টিভি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাউকে জানিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও মামলা চলছে অদালতে। কিন্তু সরকারের তরফে মন্দিরের করিডর নির্মাণের কাজ চলছে। তখন, মসজিদ কমিটি সহ স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেই যে, মন্দিরের করিডর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭০০ স্কোয়ার ফুট জমি মন্দির কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়া হবে। সেইমতো জমি হস্তান্তর করা হয়েছে মন্দিরের করিডর নির্মাণের জন্য। তবে, জমি মন্দির কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার ফলে মন্দিরের তরফ থেকে মসজিদ কমিটিকে ১০০০ স্কোয়ার ফুট জমি হস্তান্তর করেছে।
উল্লেখ্য, স্থানীয় আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর রাস্তোগী বারাণসী সিভিল কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ভেঙে তৎসংলগ্ন জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। তাই এই জমি হিন্দুদের বলে দাবি জানিয়ে স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বরের পক্ষে আর্জি জানিয়েছিলেন ওই আইনজীবী। তার নিদর্শন পেতে আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে মসজিদের নীচে মাটি বা স্থাপত্য পরীক্ষা করার আবেদনও জানানো হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে বারাণসীর সিভিল কোর্ট আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআইকেকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির-জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সে সমীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়। এই সমীক্ষা পরিচালনার জন্য এএসআইকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে বলেছে যার মধ্যে থাকবেন দুজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিও। সমীক্ষার ব্যয়ভার নেবে যোগী সরকার। আবেদনে আরও দাবি করা হয়েছিল, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৪৪ সালে সেখানে মসজিদটি নির্মাণের জন্য ২,০০০ বছরের পুরানো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটি অংশ ভেঙে ফেলেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এই সমীক্ষা প্রয়োজন। তার সেই আবেদনের বিরোধিতা করে জ্ঞানবাপী মসজিদের ম্যানেজিং কমিটি আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মাসাজিদ। কিন্তু আদালত এএসআইকে জরিপ চালানোর অনুমতি দিয়ে বলেছে, সেখানে সত্যিই কোনও মন্দিরের স্থাপত্যের অংশবিশেষ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন থাকলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রাখতে মসজিদ কমিটি মন্দিরের করিডর নির্মাণের জন্য ১৭০০ বর্গ ফুট জমি মন্দির কমিটিকে দিয়ে িদেয। তার পরিবর্তে পায় ১০০০ বর্গ ফুট জমি। আদালতে বিবাদ চললেও মসজিদ কমিটি ও মন্দির কমিটি এভাবে জমি আদানপ্রাদন করে বুজিয়ে দিল সম্প্রীতির ঐতিহ্য এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct