স্বাস্থ্যের সাতকাহন
ফৈয়াজ আহমেদ: আধুনিক সমাজে থাইরয়েডের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, অনেক মানুষ এই হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কেউ বুঝতে পারছেন, কেউ পারছেন না। এটা এমন এক সমস্যা, রোগী নিজেও বলতে পারেন না আসলে তাঁর কী সমস্যা হচ্ছে।
থাইরয়েড হলো আমাদের গলার দুই পাশে থাকা বিশেষ হরমোন গ্রন্থি। এই গ্রন্থি আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা ছাড়াও এর বিশেষ কিছু কাজ থাকে। শরীরের জন্য এ থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। এর নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। এই দুই সমস্যায় উপসর্গও ভিন্ন হয়ে থাকে।
ডায়েট এবং জীবনযাত্রা ঠিক রাখার মাধ্যমে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, প্রজাপতি আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষমতা কিন্তু অপরিসীম। যেমন বিপাক থেকে শরীর বৃদ্ধিতে এর বড় প্রভাব রয়েছে। থার্মোরেগুলেশন, হরমোনাল ফাংশন এবং ওজন পরিচালনায় এই গ্রন্থি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না, তা জানান দেয় শরীরের কিছু উপসর্গ।
উপসর্গ
• থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গলা ফুলে যেতে পারে
• নিয়মিত শরীর অবসাদগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজম
• রাতভর পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও সকালে অবসন্ন লাগে
• সারা দিন ধরে ঝিমুনি আসে
• অতিরিক্ত চুল পড়ে
• হঠাৎ করেই শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণ
• অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
• হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে
• গরমের সময় বেশি গরম লাগে, শীতের সময় বেশি ঠান্ডা লাগা
থাইরয়েডজনিত সমস্যা মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে। তা ছাড়া আর অধিক হারে এই রোগের বৃদ্ধির অন্যতম কারণ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন।
যেসব কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে
• জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার
• শারীরিক কার্যক্রম কম থাকা
• অগোছালো জীবনযাপন
• খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করা
• সূর্যের আলোতে না যাওয়া
• আয়োডিনের ভারসাম্য না থাকা
• গভীর রাতে খাওয়া এবং ঘুমানো
প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম মানলে এবং কিছু পরিহার করলে থাইরয়েড আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার মধ্যে জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকা। যত দ্রুত সম্ভব এসব খাবার খাওয়া বন্ধ করা। তাহলে আপনি নিজেই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখতে পাবেন। আর এর সঙ্গে করণীয় হলো:
• নিয়মিত ব্যায়াম করা, সকালে হাঁটা, যোগাসন করা, নাচ করা, নিজের পছন্দমতো যেকোনো অ্যাক্টিভিটি করা।
• থাইরয়েডের সঙ্গে মনোসংযোগের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে, যার জন্য খাবার আস্তে আস্তে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। ধীরেসুস্থে খাবার চিবিয়ে তৃপ্তি করে খান, তাহলে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন, অল্প খাওয়াতে পেট ভরে যাবে, মুখের লালা বেশি উৎপাদিত হবে, সেই কারণে কম ইনসুলিন দিয়ে খাবার হজম হয়ে যাবে।
• রোজ সকালে হালকা গরম জলর সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
• আদা সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া উপায়। আদা খনিজে ভরপুর, যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাইরয়েডের সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়তে খুবই সহায়ক, আদা চা পান করুন, উপকার পাবেন।
• ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি থাইরয়েডের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি খুবই সহায়ক বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী। তাই খাদ্যতালিকায় ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম, প্রভৃতি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন।
• সূর্যের আলোতেই শরীর একমাত্র ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে, তাই দিনে অন্তত পক্ষে ১৫ মিনিট অবশ্যই সূর্যের আলোয় থাকুন। ফলে আপনার শরীরে ভালোভাবে ক্যালসিয়ামের শোষণ হবে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
• ডেইরি প্রোডাক্ট দুধ, পনির, দই, থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারী। এসব খাদ্যে আয়োডিন এবং খনিজ বিপুল পরিমাণে থাকে, যা থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারী।
থাইরয়েডের সমস্যা ধীরে ধীরে শরীরে উপসর্গে আসে, তাই উপসর্গ আসার আগেই আপনি নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন, তাতে আপনার শরীরে থাইরয়েডের ঘাটতি বা বৃদ্ধি যা–ই থাকুক, তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন, নয়তো দেখবেন থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগ আপনার গলায় এসে চাপ দিলে জীবনটা দুর্বিষহ যন্ত্রণায় ভরে উঠবে। তখন কিছুই করার থাকবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct