ফৈয়াজ আহমেদ: পোল্ট্রী ফার্মিং, ছাগল ফার্মিং, গরু খামার শুনেছেন বা দেখেছেন। কিন্তু কোয়েল ফার্মিং নতুন লাগছে তাই না। কিন্তু বর্তমানে কোয়েল ফার্মিং একটি জনপ্রিয় ফার্মিং ব্যবসা। কোয়েলের আদি নিবাস জাপানে। কোয়েল এক অত্যন্ত জনপ্রিয় পাখি। এই পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। তাই, কোয়েল পালনে কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়ে থাকেন। কোয়েলকে একটি লাভজনক পোলট্টি উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোয়েল পালন (Quail farming) করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ ইত্যাদি জায়গাতেও কোয়েল পালন করা যায়। এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক সব স্থানেই কোয়েল পালন সহজতর। তাই, কোয়েল পালনে কৃষকরা বেশি ঝুঁকছেন।
কোয়েলের ঘর নির্মাণঃ কোয়েলের ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
১) পাখিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
২) প্রাকৃতিক আলো-বাতাস নিশ্চিত করা ও প্রয়োজন মতো তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা।
৩) অতিরিক্ত শীত, গরম বা বৃষ্টি ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষা করা।
৪) নির্দিষ্ট দূরত্বে ও প্রয়োজনীয় আকারের ঘর নির্মাণ করা।
৫) বিভিন্ন বয়সের কোয়েলের জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা।
৬) ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জন্তুর হাত থেকে এদের রক্ষা করা।
৭) রোগ-জীবাণুর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা।
৮) খামারে পাখির মল-মূত্রের কারণে যে কোন দুর্গন্ধ না হয়, সেজন্য আগে থেকেই সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
খাবার পাত্রঃ একটি উৎকৃষ্টমানের কোয়েলের খাবার পাত্রের বৈশিষ্ট হবে-
(ক) একটি খাদ্য দিয়ে সহজেয়ই পূর্ণ করা যাবে।
(খ) পরিস্কার করা সহজ হবে।
জলের পাত্রঃ খাঁচা বা লিটার যে পদ্ধতিতেই পালন করা হোক না কেন একটি উৎকৃষ্টমানের কোয়েলর জলের পাত্রের বৈশিষ্ট হবে নিম্নরূপ-
(ক) এটি থেকে পাখি পরিচ্ছন্ন জলের সরবরাহ পাবে।
(খ) এটি জল পানের উপযোগী হবে।
(গ) পরিস্কার করা সহজ হবে।
(ঘ) টেকসই ও দামে সস্তা হবে৷।
লিটার ও লিটার ব্যবস্থাপনা:
লিটারঃ বাসস্থানকে আরামদায়ক করার জন্য কোয়েলের ঘরে যে বিছানা ব্যবহার করা হয় তাই লিটার।
লিটারের উপকরণঃ লিটার হিসেবে সাধারণত ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া, ধান বা গমের শুকনো খড়ের টুকরো, কাঠের ছিলকা, বাদামের খোসার গুঁড়া ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এগুলো এককভাবে ব্যবহার না করে সাধারণত কয়েকটি একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো।
লিটার প্রস্তুতঃ শুরুতে ৫ সেমি.পুরু লিটার সামগ্রী পরিস্কার মেঝেতে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধীরে ধীরে আরো লিটার সামগ্রী যোগ করে ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে এই পুরুত্ব ১০ সেমি.-এ উন্নীত করতে হবে। ব্যাটারি ব্রুডারে পালিত বাচ্চার ক্ষেত্রে শুরুতেই ১০ সে.মি. পুরু লিটার ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাজা লিটার সামগ্রী বিছানোর পরপরই কোনো উৎকৃষ্টমানের ও কার্যকরী জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে বাচ্চা নামানোর ৯৬ ঘণ্টা পূর্বেই এ কাজ শেষ করতে হবে।
কোয়েলের খাদ্যঃ কোয়েল খামারের মোট খরচের ৬০-৭০% ই খাদ্য বাবদ ধরা হয়৷ অন্যান্য পোল্ট্রির মতো কোয়েলের খাদ্য তালিকায়ও ৬ টি পুষ্টি উপাদান যেমন জল , শর্করা, স্নেহ পদার্থ , আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকতে হবে। কোয়েল পালন থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে সবগুলো পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হবে। নিম্নমানের ফাঙ্গাসপড়া ভেজাল খাদ্য খাওয়ানো উচিত নয়৷ খাদ্য গুঁড়ো করে বিশেষত (শুঁটকি মাছ, ঝিনুক, গম ইত্যাদি) সরবরাহ করা উচিত নয়৷ একবার খাবার সরবরাহ করলে তা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবার সরবরাহ করা যাবে না৷ দৈনিক তিনবার, যেমন-সকাল ৬টা, দুপুর ১২-১টা এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে খাবার দেওয়া উচিত৷ খাবারপাত্র কখনোই পুরোপুরিভাবে খাদ্য দিয়ে পূর্ণ করা যাবে না৷ খাদ্যপাত্রগুলো নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে৷
জলঃ যেকোন প্রাণীর ক্ষেত্রেই জলের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য বিপাক, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্তে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও রাসায়নিক দ্রব্য পরিবহন প্রভৃতি এই জলের মাধ্যমেই ঘটে। বাচ্চা কোয়েলের জলের প্রয়োজনীয়তা খাদ্যের পরিমাণ ও বয়সের সাথে বদলাতে থাকে। সাধারণত দেখা যায় ১২-১৫, ১৯-২২ ও ২৬-২৯ দিন বয়সে এরা দেহের ওজনের যথাক্রমে ৪.২, ৩.১ ও ২.৭ গুণ জল গ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতিগ্রাম ওজন বৃদ্ধির জন্য ২ গ্রাম হারে জল গ্রহণ করে। তবে, সাধারণভাবে যে-কোন বয়সের কোয়েল শুষ্ক খাবারের দ্বিগুণ জল গ্রহণ করে থাকে৷
পরিচর্যা: কোয়েলেরও তেমন কোন রোগ ব্যাধি নেই বললেই চলে। তবে মাঝে মাঝে কোয়েলকে রোগক্রান্ত হতে দেখা যায়। কোন কোয়েল অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকে সুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যে আমাশয় উল্লেখ্যযোগ্য। এই রোগ হলে কোয়েলের ঘন ঘন পায়খানা হয়, খাবার গ্রহনে অনীহা দেখা দেয় পাশাপাশি কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এম্বাজিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।
কোয়েল পালনে লাভের পরিমান: ১০০০ কোয়েল থেকে মাসিক আয় হতে পারে, দৈনিক ডিম পাওয়া যাবে ৭৫০ টি। যার বাজার মূল্য প্রায় অনেক। ১০০০ কোয়েলের থাকে প্রায় ২০ হাজারের বেশি টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct