নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ প্রশাসন সহ রাজ্যের ১৬ টি জেলার দুষ্কৃতী তালিকা রাজ্য হাইকোর্টকে জমা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এই তালিকা জমা দেওয়ার পর পরই এই গোপন রিপোর্ট প্রকাশে চলে আসে।দেখা যায় রিপোর্টে রাজ্যের মন্ত্রী সহ একাধিক বিধায়ক কে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে উল্লেখ করেছে। এমনকি এসেছে এক দিনমজুরের নামও। এই তালিকা তে অন্যান্য জেলার সাথে মালদা জেলার ৪ জন তৃণমূল কর্মীর নাম রয়েছে। তার মধ্যে একজন পেশায় দিনমজুর হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা বাজারের জয়দেব ওঝা। সে পেশায় দিনমজুর হলেও নির্বাচনের সময় শাসক দলের মাস্কাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
বিধানসভা নির্বাচনের মাস দুয়েকের মধ্যেই এরকম এক তালিকা প্রকাশ্যে চলে আসায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন শাসক দল।অন্যদিকে এই তালিকা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র।এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসলে দেখা যায় এই তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ বেশ কয়েকজন বিধায়কের নাম এবং অন্যান্য জেলার সাথে মালদা জেলার চারজন এর নামও রয়েছে। যাদের মধ্যে দুজন হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার। এদের মধ্যে একজন হলেন জেলায় তৃণমূলের ম্যাসকট বলে পরিচিত দিনমজুর জয়দেব ওঝা। ভোটের আগে উত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দলের বিভিন্ন জনসভায় গিয়েছেন। পেশায় দিনমজুর জয়দেব বাবু অজানা আতঙ্কে এখন দলের নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বুঝতেই পারছেন না কিভাবে তার নাম তালিকায় গেল। কেননা নির্বাচনের সময় তিনি এলাকার বিজেপির কর্মীরা যারা উল্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেশ কিছুদিন। এখন তার নামে রাজনৈতিক হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে তিনি ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন। ভাঙ্গা ঘরে বসে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনমজুর জয়দেব ওঝা। অন্যদিকে এই তালিকায় নাম এসেছে হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শাসক দলের অঞ্চল সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রতিনিধি সঞ্জীব গুপ্তার। সঞ্জীব বাবু বক্তব্য আজ পর্যন্ত কোন পুলিশ কেসে তার নাম জড়ায়নি।তিনি একজন সামান্য ঔষধ ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক। কেন তার নাম জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দুষ্কৃতীদের তালিকায় তা তিনি বুঝতে পারছেন না। এর পিছনে এলাকার বিজেপি কর্মীরা রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার নাম ওই তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মালদা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান কেন্দ্রে বিজেপি সরকার হয়ে কাজ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এই কমিশনের সদস্যরা বিজেপির পুতুলে পরিণত হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রের সদস্যরা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে এই তালিকা সেভাবে প্রকাশ হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।এদিকে এ প্রসঙ্গে বিজেপির উত্তর মালদার সংসদ খগেন মুর্মু জানান ভোটের সময় নির্বিচারে শাসকদল জেলাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল।এখনো আমাদের অনেক কর্মী ঘরে ফিরতে পারেনি। বিজেপি কর্মী পশ্চিমবঙ্গে খুন হয়েছেন। আমি মনে করি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিরপেক্ষ ভাবে তাদের তদন্ত চালিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে পরিষ্কার হয়ে গেল তৃণমূল ভোটে কি হারে সন্ত্রাস করেছে। রাজ্যের তৃণমূলের সন্ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে। তারই প্রতিফলন মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট এসেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct