আপনজন ডেস্ক: রাজ্যে বিধানসভার শূন্য আসনে উপনির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে রাজনৈতিক আলোচনা তুঙ্গে। রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির জন্য উপনির্বাচনের ঘোষণা করছে না নির্বাচন কমিশন এই ধারণা তৈরি করারর চেষ্টা করা হলেও রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি চাইছে না এখনই শূন্য আসনে উপনির্বাচন হোক। বিজেপি অন্যতম কৌশল যেকোনও ভাবেই উপনির্বাচন নভেম্বর মাস পার করিয়ে দেওয়া, যাতে ৫ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব না হয়। কারণ, কোনওভাবে উপনির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারলে নিয়ম অনুযায়ী ৫ নভেম্বরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বিধানসভা আসন থেকে জিতে আসতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। সেই সুযোগ বিজেপি নিতে চাইতে বুঝতে পেরে গত বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেস সংসদীয় দলের এ প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে রাজ্যের শূন্য থাকা বিধানসভা আসনে অবিলম্বে উপনির্বাচন করার দাবি জানানো হয়। সেই বৈঠকের পরই নির্বাচন কমিশন তৎপর হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাব কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং কোচবিহার সহ পাঁচটি জেলার নির্বাচন অফিসারদের (ডিআইও) প্রতি লিখিত চিঠিতে সমস্ত ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটগুলির প্রথম স্তরের চেকিং (এফএলসি) পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
আফতাব প্রথম স্তরের চেকিং (এফএলসি) পরিচালনার সময় সব ধরনের ‘স্যানিটাইটিসেশন, সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্কের মতো সমস্ত স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এফএলসি ৩আগস্ট থেকে শুরু হবে এবং ৬ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, সেখানে যে মোট ৩,৩১৪টি ইভিএম ও সমান সংখ্যক ভিভিপ্যাট রয়েছে সে সবের জন্য মোট ৬২ জন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োজিত করা হচ্ছে চেকিং করার জন্য। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এক উচ্চ পদস্থ নির্বাচন আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, আমরা উপনির্বাচন সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। কারণ, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বচান কমিশন।
তবে এটা নিশ্চিত যে উপনির্বচানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং প্রথম স্তরের চেকিং (এফএলসি) তারই প্রথম পদক্ষেপ। তবে নির্বচানের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণার আগে আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের এই নির্দেশ এল বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার পরদিন। ওই বৈঠকে তৃণমূলের সাংসদদের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনকে যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাই যথাযথ কোভিড প্রোটোকল মেনে উপনির্বাচন করতে কোনও অসুবিধা নেই।
উল্লেখ্য, এই উপনির্বাচন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যাওয়ায় সঙ্কটের মধ্যে। সংবিধান অনুযায়ী দ্বারা কোনও ব্যক্তি রাজ্য বিধানসভায় কিংবা বিধান পরিষদে না জিতে কেবলমাত্র ছয় মাস পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন থাকতে পারেন। ছয় মাসের মধ্যে বিধাসভার সদস্য না হতে পারলে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে। তাই, ৫ নভেম্বরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভায় নির্বাচিত হওযাটা অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
উপনির্বাচনের বিষয়ে সংবাদ সংস্থার তরফে জানতে চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নির্বাচন কমিশন রাজ্যকে রাজ্যসভার দুটি আসনের জন্য নির্বাচন বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। যদিও তারা বিধানসভা উপনির্বচান নিয়ে সম্পর্কে কিছুই বলেনি। তবে, রাজ্য সরকার রাজ্যসভা এবং বিধানসভা উভয় ক্ষেত্রের শূন্য আসনে নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, কোচবিহারের দিনহাটা ও শান্তিপুর বিধানসভা আসন শূন্য হয় বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করায়। তারা সাংসদ পদকেই ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে ভবানীপুর কেন্দ্রে থেকে রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করার সেটি শূন্য হয়ে পড়ে।
এছাড়া, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা আসনের বিধায়ক কাজল সিনহা ও জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর ফলে সেই আসন দুটি শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু কমিশন মুর্শিদাবাদের দুটি বিধানসভা কেন্দ্র সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেনি। পরিস্থিতি বলছে, করোনার কারণে বিধানসভা উপনির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলেও ফের উপনির্বাচন হওযার সম্ভাবনা জোর হয়ে উঠেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct