আপনজন ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের সবচাইতে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বিশিষ্ট জেলা মুর্শিদাবাদে রাজ্য সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছিল। ২০১৮ সালে সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে সায় দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদ জেলায় রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন আপাতত বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে শুরু হওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও খাগড়া হাটের কাছে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ সমাপ্ত। তার মধ্যে এবছর স্নাতকোত্তর বিভাগের পাঠক্রম চালুর নোটিশ প্রকাশ করা হয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে। এর ফলে মুর্শিদাবাদ থেকে আর স্নাতকোত্তরের জন্য কল্যাণী বা কলকাতায় ছুটে যেতে হবে না। এখন বহরমপুরেই স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ পাবে।
জানা গেছে, মুর্শিদাবাদে ২১টি ডিগ্রি কলেজ আছে। এছাড়া বিএড, ডিএলএড কলেজ আছে। কিন্তু তার সব কটি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। তাই মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তার আওতায় ধীরে ধীরে কলেজগুলি নিয়ে আসা হবে বলে উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গেছে।
তবে, মুর্শিদাবাদবাসীদের জন্য খুশির খবর মুর্শিদাবাদ বিদ্যালয়ে ২০২১-২২ বর্ষে মোট ১৪টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন করার সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তবে, সেই ১৪টি বিষয়য়ের তালিকায় বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত স্থান পেলেও স্থান পায়নি আরবি বা উর্দু বিষয়। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের উচ্চ শিক্ষা দফতরে বিশেষ সচিবের জারি করা সার্কুলারে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাের্যর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ বর্ষে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে ১৪টি বিষয়ে পঠ্পাঠনের জন্য ‘ইন প্রিন্সিপাল’ অনুমোদন দেওয়া হল। সেই ১৪টি বিষয় হল: বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃত, শিক্ষাবিজ্ঞান, ইংরেজি, অঙ্ক, আইন, ফিজিওলজি, সেরিকালচার, ফিজিক্স, বোটানি ও ভূগোল।
একই সঙ্গে এতগুলো বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ থাকলেও সংখ্যালঘুপ্রধান এই জেলায় আরবি বা উর্দু বিষয়ে পড়ার সুযোগ না থাকায় সংখ্যালঘু মহল থেকে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পার্শ্ববর্তী জেলা মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন আরবিতে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ রয়েছে তেমনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যারয়ে উর্দুতে স্নাতকোত্তর করা সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের এক শিক্ষকের বক্তব্য, এখন বহু মুসলিম পড়ুয়া সংস্কৃত নিয়ে পড়ছে। তাই মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় তারা উপকৃত হবে। তবে, মুসলিম অধ্যুষিত এই জেলায় বিশেস করে আরবি নিয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ার জন্য পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সংস্কৃতের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে আরবিতে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। আবার অনেকে বলছেন, ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী প্রায় ৭১ লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট জেলা মুর্শিদাবাদে যদি বা রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হল, কিন্তু তাতে কেন আরবি বিষয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ দেওয়া হল না তা অবাক করার বিষয়। তাই তিনি বিষয়টি রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct