নাজমা আহমেদ: হ্রদ বা লেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য অনুষঙ্গ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শনের হিসেবে লেকের কদর তাই সবসময়ই বেশি। পৃথিবীজুড়ে রয়েছে অনাবিল সৌন্দর্যের অসংখ্য লেক। এসকল লেকের অপরূপ রূপ বিমোহিত করে দর্শনার্থীদের। এসকল লেকের মধ্যে বৈকাল হ্রদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন লেক। এটি শুধু আকারেই বড় নয়, এর রয়েছে অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য যা যেকাউকেই অবাক করে। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বৈকাল হ্রদ সম্পর্কে কিছু তথ্য। বৈকাল হ্রদ রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণভাগে অবস্থিত। বৈকাল নামটিই এসেছে তিইউরস্কি ভাষার ‘বাই-কুল’ আঞ্চলিক শব্দ থেকে। যার বাংলা অর্থ ‘সম্পদশালী হ্রদ’। হ্রদটির আয়তন প্রায় ৩১,৫০০ বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের গভীরতম হ্রদ। এর সর্বাধিক গভীরতা ১,৬৩৭ মিটার। তিনশোরও বেশি নদীর জল এসে এই হ্রদে পড়েছে। গবেষকদের মতে, এটি প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর পুরনো একটি হ্রদ। । বৈকাল হ্রদকে অনেকে ‘সাইবেরিয়ার নীল নয়ন’ বা ‘সাইবেরিয়ার মুক্তা’ নামেও ডেকে থাকে। বৈকাল হ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য আধার। প্রকৃতি যেন তার সকল সৌন্দর্য আর প্রাচুর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। এ যেনো স্বর্গের এক টুকরো সৌন্দর্য নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে। বিশাল আয়তনের এই হ্রদের যেদিকেই তাকাবেন দৃষ্টি জুড়ে শুধু অপার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য চোখে পড়বে।
এই হ্রদের জল এতটাই স্বচ্ছ যে খালি চোখে ৪০ মিটার পর্যন্ত জলর নিচের বস্তু অনায়াশে দেখতে পাওয়া যায়। বৈকালের পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও জৈববৈচিত্র্যও নজর কাড়ার মতো। কারণ বৈকাল অঞ্চলে প্রায় ১৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে যার দুই-তৃতীয়াংশই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বৈকাল হ্রদের জল অত্যন্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ; হ্রদের পাঁচ হাজার ফুট গভীরেও জলজ প্রাণীর বাস রয়েছে। এর তলদেশে রয়েছে অমূল্য, গোলেমিংকা, স্যামন প্রভৃতি মাছ এবং নানাজাতের শামুক, শ্যাওলা প্রভৃতি প্রজাতি যা অত্যন্ত মূল্যবান ও কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যত্র বিরল। বৈকালের নিচে রয়েছে আরো বহু প্রকারে প্রাকৃতিক সম্পদ। ১৯৯৬ সালে এটিকে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করা হয়।
শীতের সময় বৈকালের হ্রদের সৌন্দর্য এক অনন্য রূপ ধারণ করে। শীতে সাইবেরিয়ার প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বৈকাল হ্রদের জল জমে বরফ হয়ে যায়। ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই হ্রদ দেড় থেকে দুই মিটার পর্যন্ত মোটা বরফের চাদরে ঢেকে যায়। কিন্তু সেই বরফের স্তর এতটাই স্বচ্ছ যে এর নিচের সবকিছুই একেবারে পরিষ্কার দেখতে পাবেন। হ্রদের গভীরে খেলা করা মাছ, সবুজ পাথর, হ্রদের নিচে জন্মানো জলজ গাছ সবই খালি চোখে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন আপনি। লেকের নিচে ৪০ মিটার পর্যন্ত দৃষ্টি অনায়াসে চলে যাবে। উপরের বরফের স্তর এতো পুরু আর শক্ত যে অনায়াসে তার উপর দিয়ে জিপ ট্রাক চলাচল করতে পারে। এর উপর দিয়ে সবাই হাঁটা-চলা স্ক্যটিং করে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct