শুধু দিয়ে গেলাম
গোলাম মোস্তাফা মুনু
________________________
বাজারের এক কোণে দাঁড়িয়ে শাজাহান ভাবতে থাকে আজ সে কী কী কেনাকাটা করবে। তার আয়-রোজগার খুবই কম। তাই পকেটে বেশি টাকা নিয়ে যেতে পারেনি। যত টাকা নিয়ে গেছে তত টাকার মধ্যেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হবে। ছেলেরা মাংস খেতে চেয়েছে। মা পানের সরঞ্জাম কিনতে বলেছেন। স্ত্রী চাল-ডাল, তরিতরকারি ছাড়াও থালা-বাসন ধোয়ার সাবান নিতে বলেছে। ছোট মেয়েটি তার বইয়ের ছবি রং করার জন্য রঙের পেন্সিল আনতে বলেছে। এগুলো স্মরণ করে শাজাহান নীরবে সবকিছুর হিসাব কষতে থাকে। হিসাব কষে দেখে যে মাংসের দাম ভারি পড়ে যাচ্ছে। এবার সে মনে মনে বলে - ঠিক আছে। সবই কিনবো, কিন্তু মাত্রাটা খানিক কমিয়ে দেবো। এতে বউ একটু অসন্তুষ্ট হবে,হোক,কিন্তু সবই কেনা হয়ে যাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শাজাহানের বাজারকরণের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। বাজারকরণের শেষে কখনো কখনো সে দশ টাকার পুরি তরকারি খেয়ে থাকে। আজও খাওয়ার জন্য পুরির দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্ডার করার পূর্বে জামার বুকপকেটে হাত দিয়ে দেখে মনে মনে বলে - আজ আর পুরি খাবো না। মেয়েটার জন্য রঙের পেন্সিল কিনতে হবে। - এ বলে শাজাহান সেখান থেকে রওনা দেয়।
প্রায় এক ঘণ্টা পর। শাজাহান বাড়ি প্রবেশ করে। হাতে বাজার ভর্তি ব্যাগ। বিলম্ব না করে ব্যাগখানা বারান্দায় রেখে দিয়ে অদূরে মাটিতেই বসে যায়। নিজের হাতেই নিজের পা দুটি সে মালিশ করতে শুরু করে।
এদিকে ব্যাগ ঘিরে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাজাহানের ছোট মেয়ে, দুই ছেলে এবং মা।তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলি কেনা হয়েছে কি না তা দেখার জন্য। স্ত্রী সুফেরা ব্যাগ থেকে সব জিনিস একের পর এক বের করতে থাকে আর পরিবারের সকলেই একের পর এক খুশি হতে থাকে।
আজ সারাদিন অস্বস্তিতেই কাটলো শাজাহানের। রাত্রে ভালো করে সে খাওয়া-দাওয়া করতে পারল না। কারো সাথে বেশি কথাও বলল না। দেরি না করে সে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। শুয়ে শুয়ে কাতরাতে থাকে। স্ত্রী সুফেরা তা লক্ষ্য করে। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে - তোমার কি শরীর খারাপ করছে? তুমি কাতরাচ্ছো কেন ?
কাতরাতে কাতরাতে শাজাহান বলে - আজ বাজার থেকে ফেরার পথে সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। দুটো পায়েই ভীষণ আঘাত লেগেছে।
বিছানায় স্বামীর পাশে বসে সুফেরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করে - ওষুধ খেয়েছো?
- না। বাজার করে সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এটার জন্য ওষুধ খাওয়ার দরকারও নেই। তেল দিয়ে একটু মালিশ করলেই ঠিক হয়ে যাবে। - শাজাহান কাতরাতে কাতরাতেই কথাগুলো বলল।
সুফেরা উঠে রান্না ঘরে চলে যায়। আর শাজাহান মনে মনে ভাবতে থাকে - সুফেরা কোন দিনই আমার হাত-পা মালিশ করে দেয়নি। আমিও ওকে কোন দিন বলিনি। আজ হয়তো সে এড়িয়ে যেতে পারবে না। মালিশ করতে বাধ্য হয়ে যাবে। ভালই হবে। একটু মালিশ করলেই ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। ঘুমও হবে ভালো।
একটু পরেই হাতে সরষের তেলের বোতল নিয়ে রান্নাঘর থেকে ফিরে আসে সুফেরা। সাজাহানের মাথার দিকে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বলে - তেলের বোতল এনে রাখলাম। মালিশের কাজে লাগবে। - এ বলে সে পাশের ঘরে চলে যায়। যেখানে ছেলেমেয়েরা শুয়ে রয়েছে। আর হতাশ নেত্রে সরষের তেলের বোতলের দিকে শাজাহান চেয়ে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct