আপনজন ডেস্ক: একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে দুই সন্তান নীতি চালু হতে চলেছে। কিছুদিন আগে অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সে রাজ্যে দুই সন্তান নীতি চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন। এবার যোগীআদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে চালু হতে চলেছে দুই সন্তান নীতি। এর ফলে যাদের দুটির বেশি সন্তান তারা সরকারি চাকরি েযমন পাবে না, তেমনি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ব্যাপারে উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রকাশ করেছে পপুলেশন (কন্ট্রোল, স্টেবিলাইজেশন এন্ড ওয়েলফেয়ার) বিল ২০২১।
এই বিলের প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, দুইয়ের অধিক সন্তান থাকা দম্পতি সরকারি চাকরির আবেদন করতে পারবেন না, এমনকি স্থানীয় নির্বাচনেও লড়তে পারবেন না।
বিলটি রাজ্যের বিধানসভায় তুলবেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যদিও যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য রয়েছেন যাদের দুইয়ের অধিক সন্তান রয়েছে। তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া বা বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলা হবে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার ১০ জনের কমপক্ষে তিনটি করে সন্তান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সন্তান রয়েছে উত্তরপ্রদেশের আবগারি মন্ত্রী রামনরেশ অগ্নিহোত্রীর। রামনরেশ অগ্নিহোত্রীর রয়েছে দুই পুত্র ও চার কন্যা। জলশক্তি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী মহেন্দ্র সিংয়ের দুই পুত্র ও তিন কন্যা। উত্তরপ্রদেশের কৃষিমন্ত্রী সূর্যপ্রতাপ শাহির রয়েছে এক পুত্র ও দুই কন্যা। বন ও পরিবেশ মন্ত্রী দারা সিং চৌহানের রয়েছে দুই পুত্র ও দুই কন্যা। দুগ্ধ উন্নয়ন, পশুপালন ও ফিশারিস মন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠকের এক পুত্র দুই কন্যা। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং ওরফে মতি সিংয়ের এক পুত্র ও তিন কন্যা। কোঅপারেটিভ মন্ত্রী মুকুট বিহারি বর্মার দুটি পুত্র ও তিনটি কন্যা। সংখ্যালঘু, ওয়াকফ ও হজ মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্তর দুই পুত্র এক কন্যা। আখ উন্নয়ন ও চিনিকল মন্ত্রী সুরেশ রানার দুই পুত্র ও এক কন্যা।
অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী অনিল রাজভরের রয়েছে এক পুত্র ও দুই কন্যা। যোগী আদিত্য নাথের এই নতুন বিল পাশ হলে এইসব মন্ত্রীরা আগামী নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে, বর্তমানে এই সব মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে যোগী আদিত্য নাথ কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
উত্তর প্রদেশের রাজ্য আইন কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রাজ্যের আইন কমিশন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্থিতিশীল ও কল্যাণের জন্য এই খসড়া নীতি প্রস্তুত করেছে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত জনগণের কাছ থেকে নীতিটি উন্নত করার জন্য পরামর্শ আহ্বান করা হয়েছে। এই জনমত গ্রহণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলকে কাজে লাগানো হয়েছে। রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে যেবাবে ছাত্রমহল থেকে অভিভাবকদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়েছিলে সেই কায়দায় যোগী আদিত্যনাথও উত্তরপ্রদেশের জনগণের মতামত চাইছে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
আগামী ১০দিন বিলটি সম্পর্কে জনমত সংগ্রহের পর ১৯ জুলাই বিলটি পাঠানো হবে রাজ্য সরকারের কাছে। প্রস্তাবিত নীতিতে দুই সন্তান নেওয়া সরকারি কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব সরকারি কর্মীরা দুই সন্তান নেবেন তারা চাকরি জীবনে অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ১২ মাসের ছুটি পাবে পূর্ণ বেতন ও ভাতাসহ। একই সঙ্গে জাতীয় পেনশন স্কিমের সহযোগিতা তহবিলেও তিন শতাংশ বৃদ্ধি থাকবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, দুইয়ের অধিক সন্তান থাকলে ৭৭টি সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন কারোর দুইয়ের অধিক সন্তান হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
এদিকে কোনও দম্পতির যদি শুধুমাত্র একটি সন্তান হয়, কিংবা সন্তান সংখ্যা দুইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে অনেক সুযোগ সুবিধা পাবেন তারা। সরকারি চাকরিতে থাকা কারো সন্তান সংখ্যা এক হলে পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট এবং সরকারি আবাসন প্রকল্পে অগ্রাধিকার এবং সুবিধা পাবেন। সরকারী চাকরি না থাকলেও তারা পানি ও সম্পত্তি কর, গৃহঋণ সহ বহু ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন। এক সন্তানের মা-বাবা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করলে তাদের সন্তানের ২০ বছর বয়স পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিমার সুবিধা প্রদান করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct