আপনজন ডেস্ক: অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মঙ্গলবার বিধান পরিষদ বিল পাশ হয়ে গেল। বিধান পরিষদ গড়ার পক্ষে ভোট পড়ল ১৯৬টি আর বিপক্ষে ৬৯টি। এর ফলে সংসদের মতো রাজ্য বিধানসভায় দুটি উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ হওয়ার পথ এগোল। এই বিধান পরিষদ বিল বিধানসভায় পাশ হলেও এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেতে হবে। পরিশেষে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করলে সংসদের রাজ্যসভার মতো রাজ্যে বিধান পরিষদ বা উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে। বিধান পরিষদ গঠিত হলে বর্তমানে বাম-কংগ্রেস শূন্য থাকা বিধানসভা তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ থাকবে। সংবিধান মতে, বিধান পরিষদ আদতে বিধানসভার উচ্চকক্ষ। যার গঠন সংসদের মতোই। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা। এখানেও সেই এক গঠন।
নিয়ম অনুসারে বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও বিধান পরিষদ গঠনের জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সিলমোহর দরকার। পাশাপাশি সেখানে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রকের অনুমোদন মিলতে হবে। এরপর রাজ্যসভা ও লোকসভা দুটি কক্ষেই প্রস্তাবটি পাশ তারপর দরকার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর প্রয়োজন। তবেই বিধান পরিষদ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পাবে। এই বিধান পরিষদ গঠিত হলে এর সদস্য নির্বাচিত হওয়া যাবে জেলা পরিষদ, পৌরসভার প্রতিনিধি ছাড়াও বিশিষ্টজনদের। সেক্ষেত্রে বাম কংগ্রেস শূন্য বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধি পাওয়া যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তিনি চান বিধান পরিষদের বাম কংগ্রেস প্রতিনিধি থাকুক।
কিন্তু বিধানসভা পরিষদ বিল পাশে যে ভোটাভুটি হয়েছে তার বিরুদ্ধেবিজেপির ৬৮জন বিধায়ক ভোট দিলেও সংযুক্ত মোর্চার বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও ভোট দিয়েছেন।
তাই বাম কংগ্রেস বিধান পরিষদ গঠনের বিরুদ্ধে আছে কিনা তা নিয়ে ধন্দে। বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের আমলে ১৯৫২ সালের ৫ জুন ৫১ জন সদস্যকে নিয়ে পশ্চিবাংলাতেও বিধান পরিষদ গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ তার অবলুপ্তি ঘটে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে। তাই ফের বিধান পরিষদ গঠিত হওয়ার পক্ষে বামেরা থাকছেন কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি এই বিধান পরিষদ গঠনের প্রবল বিরোধিতা করেছে। যদিও, তৃণমূল বিধায়কদের মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিধান পরিষদ থাকলেও এখানে বিজেপি আপত্তি করে বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা গণতন্ত্রের বিরোধী।
তবে, রাজ্যে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর েথকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তা অবশেষে বিলে পরিণত হল। এই বিলের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও যোগ হবে বিধানসভার সঙ্গে সঙ্গে বিধান পরিষদের তালিকায়।
আর সেক্ষেত্রে রাজ্যে উপনির্বাচন না হলেও বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাটা মমতার পক্ষে সুবিধা হবে। কারণ, আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হয় কোনিও বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে, নচেৎ বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে। যেহেতু বিধানসভা উপনির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন রা কাড়ছে না। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের ইঙ্গিতে উপনির্বাচন এখন বিশ বাঁও জলে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা মমতা আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মমতা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী না বললে নির্বাচন কমিশন বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়ে দিনক্ষণ ঘোষণা করবে না। এর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অনুরোধও জানান রাজ্যের প্রায় সাতটি শূন্য আসনে উপনির্বাচন যথাসময়ে করার জন্য। কিন্তু ‘মৌনতা’ অবলম্বন থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচন আপাতত না করার সিদ্ধান্ত নিলে মমতার মুখ্যমন্ত্রী পদ রক্ষা সঙ্কটে পড়বে বুঝতে পেরেই বোধহয় বিজেপির পক্ষে চাল। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে গেলে উপনির্বাচন বাদ দিলে বিধান পরিষদ থেকে মনোনীত সদস্য হওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই। সেই পথ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। ১৭ মে বিদান পরিষদ গড়ার অনুমোদনে সিলমোহর দিয়েছিল রাজ্য বিধানসভা। এবার বিধানসভায় বিল পাশ হল।
এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে বিধান পরিসদের সর্বোচ্চ ৯৮ আসন থাকতে পারে। আইন পরিষদের বিধানসভার মোট আসনের এক তৃতীয়াংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ বিধায়ক দ্বারা নির্বাচিত হবেন, এবং অন্য এক তৃতীয়াংশ পৌর সংস্থা, জেলা পরিষদ এবং অন্যান্য স্থানীয় সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত হবেন। সরকার কর্তৃক পরিষদ সদস্যদের মনোনয়নের বিধানও থাকবে। রাজ্যসভার মতো এটিরও চেয়ারম্যান এবং একজন ডেপুটি স্পিকার রয়েছে। সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর হতে হবে। তার মেয়াদ হবে ৩ বছর। রাজ্যপালও কিছু সদস্যকেও মনোনীত করতে পারেন। তবে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রক এ্র চূড়ান্ত অনুমোদন ৫ নভেম্বরের আগে দেয় কিনা তা দেখার। অনুমোদন না দিলে মমতার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct