আপনজন ডেস্ক: সামনে উত্তরপ্রদেশে ভোট। তার আগে একেবারে উলট পুরাণ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের প্রধান মোহত মোহন ভাগবতের। এতদিনের মুসলিম বিরোধী মনোভাবকে হাতিয়ার করে আসা মোহন ভাগবতের গলায় এখন মৈত্রীর সূর। বলা যায় তিনি মুসলিম বিরোধী মনোভাবকে একেবারে ঝেড়ে ফেলতে চান। তাই রবিবার গাজিয়াবাদে অারএসএসের শাখা সংগঠন রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চের উদ্যোগে ডা. খাওয়াজা ইফতেকারের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভাগবত বলেন, এখানে হিন্দু বা মুসলমানের প্রাধান্য বলে কিছু নেই। গণতন্ত্রের ভারতে প্রত্যেকটি মানুষের ডিএনএ এক। পাশাপাশি আরএসএস প্রধানের কড়া বার্তা, গণপিটুনিতে যারা মদত দেয়, তারা হিন্দুত্বের বিরোধী। তিন আরও বলেন, আরএসএস সংখ্যালঘু-বিরোধী বা ভারতে মুসলিমরা বিপদের মধ্যে আছেন বলে যে ‘ভয়’ দেখানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সংঘ প্রধান বলেন, যখন লোকজন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেন, তখন আমরা বলি যে আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যবদ্ধ। আমরা পৃথক নই।
মোহন ভাগবত এখন বলছেন, একতা ছাড়া কোনও ভাবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের স্তম্ভ অবশ্যই জাতীয়তাবাদ এবং পূর্ব পুরুষদের দেখানো পথ হওয়া উচিত। আমরা গণতন্ত্রের মধ্যে আছি । এখানে হিন্দু বা মুসলমানের প্রাধান্য থাকতে পারে না। এখানে শুধুমাত্র ভারতীয়র প্রাধান্য চলে। একইসঙ্গে গণপিটুনি নিয়েও এদিন কড়া বার্তা দেন আরএসএস প্রধান। সাফ জানান, গণপিটুনিতে মদত হিন্দুত্ব বিরোধী। তিনি বলেন, গণপিটুনিতে যারা মদত দেয় তারা হিন্দুত্ব বিরোধী। যদি কোনও হিন্দু বলে কোনও মুসলমান ভারতে থাকবে না তা হলে তিনি প্রকৃত হিন্দু নন। এটা আমি প্রথমবার বলছি না। এমনটাই চলে এসেছে। আমি আজ সংঘ প্রধান হয়ে বলছি। কিন্তু সংঘ যখন ছোট ছিল তখনও বক্তব্য একই ছিল। আমাদের সকলের পূর্ব পুরুষ সমান। স্বার্থ আলাদা হলেও সমাজটা এক। বক্তব্য শেষে সংঘ প্রধানের সংযোজন, দেশকে আরও শক্তিশালী করাই সংঘ পরিবারের লক্ষ্য। সমাজের উন্নতিতেই নিরন্তর কাজ চলছে তাঁদের।
মোহন ভাগবত যখন হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে একত্রিত হওয়ার কথা বলছেন, একই ডিএনএ-র কথা বরছেন তখান উত্তরপ্রদেশে চলছে ধর্মান্তর নিয়ে বিতর্ক। যোগী সরকারও ধর্মান্তরের বিষয়ে কঠোরতা শুরু করেছে।
উত্তরপ্রদেশের বহু আসনে মুসলিম ভোটারদের উপর জয় পরাজয় নির্ভর করে। তারা সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনের আগে ভাগবতের এই বক্তব্যও ইঙ্গিত দেয় যে বিজেপি রাজ্যটিতে মুসলমানদের সাথে নিয়ে যাবে। ফলে, যোগী বিরোধী মনোবাব যাতে দুরে সরে যায় মুসলিমদের মধ্যে থেকে। যদিও এর আগে মোহান ভাগবত বলেছিলেন, দেশের সব ভারতীয়র পূর্ব পুরুষ হিন্দু। বলতে চেয়েছিলেন মুসলিমদের পূর্ব পুরুষ হিন্দু।
জানা গেছে এদিনের বইটি দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা করোনার জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এদিন হিন্দি, ইংরেজি ও উর্দুৃতে ‘বৈচারিক সমন্বয়’ নামে বইটিতে রাম জন্মভূমি বিতর্কের একটি উপাখ্যানও রয়েছে। দেশের মুসলমানরা কীভাবে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ গ্রহণ করেছিল তা বলা হয়েছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও যে সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের উদাহরণ দিয়েছেন। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা। উল্লেখ্য, লেখ ডা. ইফতেকার একসময় প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি রামমন্দির সমস্যা সমাধানে গঠিত অটল হিমায়াত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
তবে, মোহান ভাগবতের মতো মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের প্রধান ইন্দ্রেশ কুমার বলেছেন, বহু বছর ধরে উগ্র এবং রাজনৈতিক নেতারা মুসলমানদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আরএসএস-বিজেপি তাদের শত্রু, তবে তা হয় না। এই বইটি এমন একটি কল দেবে যা আরএসএস-বিজেপিকে ঘৃণা করবে না, আমরা যোগাযোগ করব। কোনও হতাশা নেই, ভ্রাতৃত্ব বয়ে আনবে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে এভাবে মুসলিমদের মধ্যে বার্তা দিয়ে বিজেপির প্রতি মুসলিমদের মনোভাব নরম করার প্রচেষ্টা প্রচেষ্টা তাতে সন্দেহ নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct