আপনজন ডেস্ক: রাফায়েল-কাণ্ডে নতুন মোড় নিল। প্রায় ৫৯,০০০ টাকায় ভারতের সঙ্গে অত্যাধুনিক এই ফরাসি যুদ্ধবিমান বেচাকেনায় দুর্নীতি হয়েছে কি না, তার ‘হাই সেন্সেটিভ’ বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্স। সে জন্য এক বিচারককে নিয়োগ করা হয়েছে। ফ্রান্সের আর্থিক অপরাধ দমনসংক্রান্ত বিভাগ পিএনএফ শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে। তারপর রাফায়েল দুর্নীতি নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে।
এই সিদ্ধান্ত জানার পরই শনিবার কংগ্রেস রাফায়েল দুর্নীতির তদন্ত করতে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবি জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, জেপিসি গঠনের মাধ্যমে তদন্তই একমাত্র উপায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজে থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
রাফাল কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছুদিন ধরেই কংগ্রেস সরব। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিষয়টি কংগ্রেস বড় করে তুলে ধরেছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের আমলের চুক্তি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশনের সঙ্গে নতুন যে চুক্তি করেন, তা দেশের পক্ষে লাভজনক হয়নি। কারণ, কংগ্রেস চুক্তি করেছিল ৭৯ হাজার কোটি টাকায় ১২৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার। তা বাতিল করে মোদি সরকার ৫৯ হাজার কোটি টাকায় ৩৬টি বিমান কেনার চুক্তি করে। কংগ্রেস আমলের চুক্তিতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের (হ্যাল) লাভ হতো।
নতুন চুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বদলে লাভ হবে বেসরকারি সংস্থা রিলায়েন্সের। রাফায়েল নিয়ে অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছায়। সেখানে সরকার সিল করা খামে তাদের বক্তব্য পেশ করে। সরকারের যুক্তি ছিল, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রাফায়েল-সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ করা ঠিক হবে না। সুপ্রিম কোর্ট সরকারি অভিমত মেনে জানিয়েছিল, রাফায়েল মামলার তদন্তের কোনো প্রয়োজন আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছিল, ওই মামলা পুনর্বিচারের আরজিরও সারবত্তা নেই। তা ছাড়া কোনো বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব করার কোনো প্রমাণও মেলেনি। অবসর গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য রঞ্জন গগৈ রাজ্যসভার সদস্য হন।
সম্প্রতি ফ্রান্সের এক সংবাদমাধ্যম দাসো এভিয়েশনের বিরুদ্ধে চুক্তির মধ্যস্থতাকারীকে ১০ লাখ ইউরো বা ৯ কোটিটাকা উপহার দেওয়ার অভিযোগ আনে। তারা দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছে। সেই সংক্রান্ত কিছু নথিও প্রকাশ করে। তারই ভিত্তিতে ফ্রান্স সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। এর আগে সরকারের আর্থিক অপরাধ দমনসংক্রান্ত বিভাগ ২০১৮ সালে তদন্তের দাবি খারিজ করে জানিয়েছিল, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ নেই। এবার সেই সংস্থার তদন্তের নির্দেশ ভারতের শাসক দলের অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct