এহসানুল হক, বসিরহাট: পানীয় জলের কল আছে। কিন্তু সেই কল থেকে জল পড়ে নোনা, সেই জল মুখে দেওয়া য়ায় না এতো লবণাক্ত। তাই কোমরে কলসী আর হাতে ব্যারেল নিয়ে জল আনতে ছুটতে হয় তিন কিলোমিটার দূরে। অভিযোগ, পানীয় জলের অভাবে এলাকার স্কুলে মিড-ডে মিল থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের খাবার রান্না চলছে পুকুরের অপরিস্রুত নোনা জলেই। বিপদের ঝুঁকি নিয়েই। এমনটাই অভিযোগ এলাকার মানুষের।
ভূগর্ভের মিষ্টি জলের স্তর বিপজ্জনক ভাবে নেমে গিয়েছে। ‘লবনাক্ত’ অঞ্চলের আওতায় পড়ে গোটা এলাকা। ফলে টিউবওয়েল বসালে নোনা জল বাহির হচ্ছে। ফলে সাইকেলে বা ভ্যান-রিকশায় ড্রাম-বালতি চাপিয়ে জল আনা ছাড়া উপায় নেই। ৩০ লিটার পানীয় জল-ভর্তি একটি ড্রাম রিকশায় আনতে খরচই পড়ে যায় ৩০ টাকা। ঘুরিয়ে বললে লিটার-পিছু জলের দাম এক টাকা! সেচের অভাবে ফাঁকা পড়ে বিস্তীর্ণ চাষজমি। জল-সঙ্কটের এমনই ছবি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা বসিরহাট শহরের খুব কাছেই হাসনাবাদ ব্লকের আমলানি পঞ্চায়েত এলাকায়। পঞ্চায়েত এলাকার আষাড়িয়া,রাঘবপুর গ্রামের হাজার তিনেক মানুষের পানীয় জলের একমাত্র অবলম্বন ছিল জলসরবরাহ প্রকল্পের ট্যাপকল। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তা দিয়ে জল পড়ে না। পাইপলাইন সেই যে বিগড়েছে, আর ঠিক হয়নি। ডিপ-টিউবওয়েলে নোনাজল ওঠে। শীতের সময়েও তাই গ্রামগুলিতে পানীয় জলের হাহাকার। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের দূরদূরান্ত থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে আনা ছাড়া আর উপায় থাকে না। তকিপুর,তালপুকুর এলাকা থেকেও জল বয়ে নিয়ে আসেন অনেকে। সাইকেলের ক্যারিয়ারে দু’পাশে প্লাস্টিকের ব্যারেল বেঁধে জল বয়ে নিয়ে আসার ছবি সকালে এই গ্রামগুলির যে কোনও রাস্তায় দাঁড়ালেই নজরে পড়বে।গ্রামের মহিলাদের কোমরে কলসী নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে পানীয় জল নিয়ে আসার ছবিও প্রতি দিনের। সেই মহিলাদের শ্যামলী পাড়ূই,স্বরস্বতী দাস,ডলি বরদের কথায়, “বাড়ির পুরুষদের দিয়ে আর কাঁহাতক প্রতি দিন জল আনানো যায়!তারা বিড়ি বাধা কাজ করে এলাকার প্রধান জীবিকা বিড়ি বাধা,তাই তারা সবসময় যেতে পারে না দূরে, আবার প্রতি দিন রিকশা করে টাকা গচ্চা দিয়েও তো জল আনানোর সামর্থ্য নেই আমাদের। তাই বাধ্য হয়েই কলসী নিয়ে বেরোতে হয়।”এলাকায় ছাত্রদের অভিযোগ, “বাড়ির জন্য দূরদূরান্ত থেকে সাইকেলে ব্যারেল বেঁধে জল বয়ে আনার কাজটা প্রতি দিন সকালে আমাদেরই করতে হয়। ফলে সকালের পড়াশোনাটাও প্রতি দিন নষ্ট হচ্ছে।”
প্রত্যেকেরই ক্ষোভ, “মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা জল-সঙ্কটে ভুগছি। কেউ কিছু করছে না। জল-সরবরাহ দফতর আর প্রশাসন, সবাই এ ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতেই ব্যস্ত। আমরা তবে কোথায় যাই!” আমলানি পঞ্চায়েত প্রধান রোকেয়া মন্ডলের দাবি ,এলাকা জুড়ে পানীয় জলের সমস্যা। জলের তলায় লেয়ার নেই,এখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ছাড়া গ্রামপঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে বিহিত সম্ভব নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct