সুলেখা নাজনিন, কলকাতা: দীর্ঘ বাম শাসনে অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা মাটি মানুষের সরকার। আর মানুষের ভোটে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় বসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু ২০১১ সালে প্রথম রাজ্যে ক্ষমতায় আসা আর এখনকার মধ্যে অনেক ফারাক। তখন বিরোধী দল বলতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট থাকলেও বিজেপি ছিল না। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। এখন রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আর প্রদীপের সলতের মতো টিম টিম করে জ্বলছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রতিনিধি ভাঙড়ের বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী। বাস্তব ব্যাপার হল, সোমবার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সর্বদল ও বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে নওশাদ সিদ্দিকীকে ডাকা হয়নি। যদিও নির্দল বিধায়ককে সর্বদল বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তাই বিষয়টি নিয়ে নওশাদ সিদ্দিকী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক উঠেছে, রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক মন্তব্যকে ঘিরে। সর্বদল বৈঠকে সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ককে না নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবু বলেন, ‘উনি কোনও দল নাকি? দল হলে তবে না সর্বদল বৈঠকে আসবেন!’ এছাড়া, কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘তাঁর যদি এতই বৈঠকে যোগদানের ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই বিষয়ে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলব।’
বছর ১৪ আগে সংখ্যার গর্বে গরবিত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিরোধীদের নিয়ে মহাকরণে সাংবাদিকদের সামনে সদম্ভে ‘আমরা ওরা’ তত্ত্ব এনে বলেছিলেন, ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০! ওরা আমাদের কী করবে?’ প্রায় সেই সুর এদিন শোনা গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে। পার্থবাবু এদিন সাফ বুঝিয়ে দেন, তাদের কাছে সংযুক্ত মোর্চার বিধায়কের কোনও মূল্য নেই। এর থেকে বেশি মূল্য বরং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং তাদের সমর্থক নির্দল বিধায়ক।
অথচ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আফসোস করেছিলেন বিরোধী আসনে বাম, কংগ্রেসরা থাকলে ভাল হত। আইএসএফ, বাম বা কংগ্রেস না হলেও তারা মোর্চার শরিক। তাই মমতার আফসোসের পরও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমরা ওরা’ তত্ত্ব’ কিন্তু বুদ্ধদেববাবুর উক্তিকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যদিও, বুদ্ধদেববাবুদের সেই দম্ভের উক্তির পরিণাম আজ মানুষ দেখতে পাচ্ছে। অবশ্য সেই পরিস্থিতি এখন রাজ্যে নেই। পার্থ বাবুর দল তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।
তবে, সর্বদলীয় বৈঠকে ডাক না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এ ব্যাপারে নওশাদ জানান, ‘সর্বদলীয় বৈঠকে আমাকে অফিসিয়ালি কল বা মেইল করা হয়নি। সেইজন্য আমি সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত হইনি। আমাকে না ডাকার কারণ জানতে মাননীয় স্পিকারের কাছে মেইল করছি ।
সর্বদলীয় বৈঠকে না ডাকা নিয়ে নওশাদ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। নওশাদ এ ব্যাপারে ’আপনজন’কে বলেন, ‘জনমানসে একটা প্রশ্ন ঘোরে যে তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে একটা সেটিং আছে। সেক্ষেত্রে সর্বদলীয় বৈঠকে না ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ওই কথার উপরে।’ তাই নওশাদ নিজেই প্রশ্ন তোলেন, সত্যিই কি সেটিং আছে যে, বিজেপি ও তৃণমূল মিলে একসাথে বৈঠক করে নিল। আর সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রতিনিধিকে অনুপস্থিত রেখে নিজেদের মধ্যে শলা পরামর্শের মাধ্যমে ঠিক করে নিল আগামী দিনে বাংলাকে কীভাবে চালাবে বিজেপি আর তৃণমূল মিলে, এটা হয়তো হতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct