সুলেখা নাজনিন, মালদা: রাজ্যের মধ্যে যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই মালদা কিংবা পার্শ্ববর্তী মুর্শিদাবাদ জেলার বহু ছাত্রছাত্রী আরবিতে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি করার জন্য আর তেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না। কিন্তু বর্তমানে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগীয় প্রধানকে ঘিরে পড়ুয়াদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগীয় প্রধান সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবিতে বেশ কয়েকজন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া উপাচার্য শান্তি ছেত্রীর কাছে চিঠি লিখে আর্জি জানিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে উপাচার্য শান্তি ছেত্রীর কোনও মতামত এখনও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করে আসছেন ড. সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়। এমএ, পিএইচডি ডিগ্রিধারী সৌরেনবাবু দক্ষতার সঙ্গে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করে আসছিলেন বলে ছাত্র মহল সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু আরবি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক থেকে স্থানান্তরিত হয়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালযের আরবি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও, ছাত্র মহলের অভিযোগ সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরবি বিষয়ে কোনও ডিগ্রি থাকা তো দূরের কথা তার আরবি বিষয়ে অক্ষরজ্ঞানও নেই। যদিও, এ ব্যাপারে সত্যতা যাচাই করতে সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করারর চেষ্টা করলেও তা বিফল হয়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি থেকে পরিষ্কার তিনি আদতে বাংলা বিভাগের দীর্ঘদিনের শিক্ষক। বাংলা এমএ ছাড়াও পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে তার। তাই আরবি বিভাগের পরিচালনা উন্নত করার লক্ষ্যে তাকে িবভাগীয় প্রদান করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির অধ্যাপকদের দাবি। তবে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমহল সূত্র আরও জানাচ্ছে, বাংলা বিভাগ থেকে সরিয়ে আরবি বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুধু তাই নয়, ওই বিভাগের পিএইচ ডি থিসিস পেপার মূল্যায়নের গুরু দায়িত্ব পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে ওই বিভাগীয় প্রধানকে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তি ছেত্রীর এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্রমশ ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে আরবি বিভাগের পড়ুয়াদের মধ্যে। তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আরবি বিভাগের একদল পড়ুয়া। অবিলম্বে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে বাংলা বিভাগের ওই অধ্যাপকের অপসারণ চেয়ে উপাচার্যকে চিঠি দিলেন তারা।
পড়ুয়াদের দাবি, আরবি বিভাগের যে অধ্যাপকেরা রয়েছেন, তারা এতদিন সাফল্যের সঙ্গে বিভাগ পরিচালনা করেছেন। প্রত্যেক অধ্যাপকই অত্যন্ত ছাত্রদরদি। অথচ তাদের কাউকে বিভাগীয় প্রধান না করে অন্য বিভাগের এমন একজনকে বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে, যিনি না বোঝেন আরবি ভাষা, না আছে আরবি জ্ঞান। আরবিতে অক্ষরজ্ঞানহীন কিংবা ডিগ্রিহীন এমন একজনকে বিভাগের প্রধান করা মেনে নিতে পারছেন না পড়ুয়ারা।
ওই সকল পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, তাদের বিষয়গত সমস্যা বিভাগীয় প্রধান সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে বোঝা শক্ত ব্যাপার। তেমনই সিলেবাস অথবা বোর্ড অব স্টাডিজ-এর কিছুই তিনি বুঝতে পারবেন না। আরও হাস্যস্পদ ব্যাপার হল আরবি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন সেই আরবি বিভাগের পিএইচডি থিসিস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার উপর।
ইমরান, নওয়াজ শরিফ, আকবর আলির মতো স্নাতকোত্তর পড়ুয়ারা সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, উপাচার্য যেটা করেছেন সেটা অনৈতিক, ছাত্র স্বার্থ বিরোধী। যিনি আরবির একটা শব্দও বোঝেন না, তাকে সরানোর জন্য আমরা উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি। যদি উপাচার্য না সরান, তাহলে আমরা আন্দোলনের পথে যাব।
এই সকল পড়ুয়ার পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকরাও। এক অভিভাবক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সন্তানকে পাঠিয়েছি আরবি শিখতে। শুনছি বাংলার অধ্যাপককে প্রধান করা হয়েছে। সন্তান কি শিখবে? আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, পড়ুয়াদের এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। আরিব বিভাগের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যাচ্ছে, সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দীর্ঘদিনের অধ্যাপক। তিনি অারবি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনের পর আরবি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে তার ভূমিকা রয়েছে। গত ২১ জুন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগীয় প্রদান হিসেবে সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর সম্বলিত নোটিশে দেখা যাছে, সেখানে লেখা রয়েছে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসানের তত্ত্বাবধানে মুনিরুল ইসলামের গবেষণা পত্র ‘আরবি শিক্ষায় এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল-এর অবদান’ শীর্ষক গবেষণা পত্রের চূড়ান্ত ভাইভা হবে ২৪জুন, দুপুর দুটোয়। ফলে, পড়ুয়াদের অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে এখনও আরবি বিভাগীয় প্রধানকে অপসারণ করেননি তাতে পরিষ্কার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আরবি বিভাগে দুজন অভিজ্ঞ ও আরবি বিষয়ে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন দুজন অধ্যাপক রয়েছেন। তার হলেন, ড. মেহেদি হাসান ও ড. মুহাম্মদ নাজমুল হক। তাদের মধ্যে থেকে বিভাগীয় প্রধান না করে বাংলা বিভাগ থেকে সরিয়ে এনে সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরবি বিভাগীয় প্রধানের আসনে বসানোয় তাই চরম সমালোচনা হচ্ছে উপাচার্য শান্তি ছেত্রীর ভূমিকা নিয়ে। অনেকে বলছেন, বাংলা বিভাগ থেকে সরিয়ে আরবি বিভাগের প্রধানের পদে বসিয়ে প্রকৃতপক্ষে সৌরেনবাবুকে অসসম্মানের পথে ঠেলে দিয়েছেন উপাচার্য শান্তি ছেত্রী।
যদিও এই বিষয়ে উপাচার্যের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গৌড়বঙ্গের আরবি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে না ওঠায় তার বিরুদ্ধে আরবি ডিগ্রি বা অক্ষর জ্ঞান থাকা নিয়ে কোনও উত্তর মেলেনি। এমনকী আরবি বিভাগের অধ্যাপকদের তরফেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct