জয়প্রকাশ কুইরি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা গ্রামের রাইডি টোলাতে হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম রঞ্জিত কালিন্দীর। বর্তমানে রঞ্জিত ১০০শতাংশ অন্ধ। তবে দৃষ্টিহীন হওয়া সত্বেও পড়াশোনার প্রতি তার একাগ্রতা এবং অধ্যাপক হবার স্বপ্ন কোনও বাধাই তাকে ছুঁতে পারেনি। ২০১০ সালে লাখড়া উপেন্দ্রনাথ হাইস্কুল থেকে ৬৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করে রঞ্জিত। তারপর লৌলাড়া রাধাচরন একাডেমী স্কুলে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয় সে। তবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস নাগাদ প্রচণ্ড মাথা ব্যথার যন্ত্রনায় ভুগতে থাকে রঞ্জিত। পরে তার ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে এবং আসতে আসতে দৃষ্টিশক্তি হারায় রঞ্জিত। তার জীবন যুদ্ধের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রঞ্জিত জানায় গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ও সরকারিভাবে সাহায্য পেয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে ব্রেন টিউমারের অপারেশন হয়। পরে সুস্থ হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে বিবেকানন্দ মিশন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ফর ব্লাইন্ড স্কুলে ব্রেইলের মাধ্যমে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৪ সালে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর পুরুলিয়ার জেকে কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে। পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২০২০ সালে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়। গ্রামবাসীরা জানান দুচোখে দেখতে না পেয়েও ২০১৯ সালে স্রেফ জেদের বশে লড়াই করেই রঞ্জিত নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বাড়ির অবস্থা একেবারেই ভালো নয় রঞ্জিতের। সরকারি সহায়তায় বাংলার আবাস যোজনায় একটা ঘর মিলেছে বলে জানান রঞ্জিতের বাবা পূর্ন কালিন্দী। বৃত্তি ছিল ঢাক বাজানো। এক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাক বাজালেও শরীর আর এখন সায় দেয় না রঞ্জিতের বাবার। জানা যায় করোনা অতিমারিতে লকডাউনের প্রথম পর্ব থেকেই পরিবারের আর্থিক সংকট আরো প্রকট হয়। জয় জহার প্রকল্পে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাতা পান পূর্নবাবু তাতে সংসার চলে না তাদের আর রঞ্জিত প্রতি মাস ১ হাজার টাকা যে দৃষ্টিহীন মানবিক ভাতা পায় তাতে তার ঔষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। রঞ্জিতের মা খুল্লনা কালিন্দী জানান, পরের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়িয়েছি। একদিকে তার পড়াশোনা অন্যদিকে সংসার চালানো এখন আর পেরে উঠতে পারছি না। বর্তমানে বাড়িতে এতটাই অভাব যে দুবেলা সবদিন খাওয়া এখন তাদের জোটে না। তবে রঞ্জিত আরও পড়াশোনা করে যেতে চায়। তার লক্ষ্য অধ্যাপক হওয়া। সরকারের কাছে কালিন্দী পরিবারের আবেদন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবস্থা করা হয় যাতে সংসারটাও বাঁচে আর সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
এবিষয়ে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় ব্যানার্জী বলেন, রঞ্জিতের যখন শরীর খারাপ হয় তখন কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। আমার কাছে যখন এসেছিল তখন কলকাতা চিত্তরঞ্জন ম্যাডিকেল হাসপাতালে তার ব্রেন টিউমারের অপারেশনের ব্যবস্থা করেছি। এমনকি রঞ্জিতের বাবার মাধ্যমে এখনও কিছু কিছু করে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকি পরিবারটিকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct