রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ: মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা থানার একটি অঞ্চল মহিশপুর। ১০ বছর আগে এখানে কোন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। নূর পরিবার জমি দান করলে নূর জাহানারা স্মৃতি উচ্চ মাদ্রাসা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এককালে অস্বাভাবিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং গঙ্গার ভাঙ্গন এ অঞ্চলের মানুষকে নিপীড়িত ও অসহায় করে রাখত। বাল্যশ্রম ও বাল্যবিবাহ এই এলাকায় ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছিল। শিশু এবং যুবকরা কার্ড খেলত, জুয়া খেলত, লটারি, অ্যালকোহল, গাঁজা এমনকি বোমা ফেলার আসক্ত ছিল। মহেশপুরের মানুষ এখন আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য মাদ্রাসার ছায়ায় ফিরে আসছে। মহেশপুর অঞ্চলের নারীশিক্ষার উৎকর্ষের জন্য ছাত্রী নিবাস নির্মাণ ও শিশু-যুবকদের শরীরচর্চার জন্য খেলার মাঠ সাজিয়ে তুলতে প্রধান শিক্ষক জানে আলমের একান্ত প্রচেষ্টায় নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসা তিন বিঘার মতো একটি সুন্দর জমি ক্রয় করছে যার আনুমানিক মূল্য সত্তর লক্ষ টাকা। এই সত্তর লক্ষ তুলবেন চাঁদার মাধ্যমে। প্রধান শিক্ষকের এই কর্মসূচি সফল করা খুব একটা সহজ না হলেও চড়াই- উতরাই এর এই দুর্গম পথে অনেক আস্থাভাজন ও মানবিক লোকেরা তাঁকে উৎসাহিত করছে।
সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, জানে আলম শুধু প্রধান শিক্ষক নন, সমাজ ও দেশ গঠনে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতূন ভাবনায় তার জুড়ি মেলা ভার। বিদ্যালয়ের শিশু ঝরে পড়া রোধে শিক্ষার্থীদের সন্ধানে ঘরে ঘরে অনুসন্ধান, বাল্যবিবাহ রোধ, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি এখন নারী শিক্ষার উন্নয় এবং শিশু ও যুবকদের জন্য একটি খেলার মাঠের জন্য জমি কিনে একটি ছাত্রী নিবাস নির্মাণ করতে চান।
মহেশপুর অঞ্চলটি সত্যই পিছিয়ে ছিল। আগে আমরা এখানে দুটি জমি অনুদান দিয়েছিলাম। মায়ের স্মৃতিতে নবনির্মিত এই মাদ্রাসাটি আমাদের কাছে কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, একটি স্মৃতিসৌধ হিসাবেও দেখছি।
আমরা এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। এলাকার জনস্বার্থে তার প্রকল্পটিকে ফলপ্রসূ করতে আমি নূর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে দশ লক্ষ টাকার চেক দান করলাম। আমি ভবিষ্যতে আরও কিছু করতে চাই খেলার মাঠ এবং হোস্টেল নির্মাণ নিঃসন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মকে আরও বেশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি-মানসিকতার বিকাশে সহায়তা করব এই প্রত্যাশা।
প্রধান শিক্ষক জানে আলম বলেন মাদ্রাসার উন্নয়নের বিষয়ে তিনি খলিলুর রহমানের সাথে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছেন। তিনি দাতা সচিব। কাছের মানুষ ! প্রাণ খুলে কথা বলা যায় তৃপ্তির সহকারে আলোচনা করা যায়। এক কথায়, উন্নয়নের নেতা হিসাবে পরিচিত একজন ভালো মানুষ। মাদ্রাসার উত্থান-পতনের কথা বলতে গিয়ে একদিন রহমান সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন “এই পিছিয়ে পড়া সমাজে আপনার কাজ করতে গিয়ে কি কি অসুবিধা হচ্ছে, আমার উত্তর ছিল আবদার সুলভ এই রকম সমস্যা সেরকম নেই তবে মাদ্রাসার জমি সাতশ কাঠা। যা এমএসকের তুলনায় খুবই কম আরও কিছু জমি থাকলে কাজ করা সুবিধাজনক হবে। তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন জমি হয়ে যাবে। গার্লস হোস্টেল ও খেলার মাঠের জন্য আমরা একটি তিন বিঘা মত জমি নিচ্ছি যার আনুমানিক মূল্য সত্তর লক্ষ টাকা। সেই সুবাদে আজ নূর পরিবার দশ লক্ষ টাকার চেন প্রদান করলেন। আমরা তাঁর স্নেহ এবং আশীর্বাদ ধন্য। জনকল্যাণে এই পরিবারের আরও অনেক অবদান রয়েছে জনকল্যাণে সরকারি খাতে বেসরকারি সম্পত্তি স্বেচ্ছাসেবী দান অত্যন্ত ব্যতিক্রমী এবং প্রশংসনীয় কাজে নূর পরিবারের দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct