নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: নামিদামি কোম্পানির নকল স্টিকার ও লোগো লাগিয়ে রমরমিয়ে চলছিল "ভেজাল" ভোজ্য তেলের কারখানা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আচমকা হানা মহকুমা শাসকের। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলসীহাটা বিবেকানন্দ মোড়ে গীতা ট্রেডিং নামে ভেজাল সরষে তেলের কারখানার হদিশ মিলল শুক্রবার। ঘটনাস্থল থেকে তেলের নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রশাসন। উদ্ধার হয়েছে নামিদামি কোম্পানির স্টিকার এবং ঝাঁঝালো যুক্ত সরষে তেল। অনুমান করা হচ্ছে কেমিক্যাল মেশানো হত তেলে। জানা গিয়েছে, সস্তা ও নিম্নমানের তেল এনে কেমিক্যাল মিশিয়ে পুনরায় নামী দামী কোম্পানির স্টিকার লাগানো টিনে ভর্তি করে বাজারজাত করা হয় এই কারখানা থেকে।
এদিন কারখানার ভিতরে যেতেই কার্যত চক্ষুচড়কগাছ মহকুমা শাসকের। কারখানার ভিতরে সস্তার তেল-কে নামিদামি কোম্পানির সরিষার তেলের মোড়কে বাজারে পাঠানোর কাজ হয় বলে অনুমান। এরপরেই মহকুমা শাসকের নির্দেশে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কারখানার যাবতীয় সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে এদিন ওই অভিযানে ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও অনির্বান বসু, চাঁচলের এসিএমওএইচ জয়ন্ত বিশ্বাস, ফুড সেফটি অফিসার আয়েশা খাতুন ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে লাইসেন্সে গরমিল ছাড়াও সেখানে নামীদামী কোম্পানির স্টিকার তৈরির মেশিন, ব্লেন্ডিং তথা দুরকম ভোজ্য তেল মেশানোর মেশিন সহ আরও কিছু যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছে প্রশাসন। তেলের নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফুড সেফটি অফিসার। পাশাপাশি পুলিশের কাছে কারখানার বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। যদিও প্রশাসনকে এড়িয়ে কীভাবে দিনের পর দিন বেআইনিভাবে ওই কারখানা চলছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেআইনি কারবারের কথা অবশ্য মানতে চাননি কারখানার মালিক।
জানা যায় বাইরে থেকে ট্যাঙ্কারে করে ওই কারখানায় সর্ষের তেল নিয়ে আসা হয়। তারপর ওই তেল টিনে ভরে তাতে নামীদামী কোম্পানির স্টিকার লাগিয়ে তা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। সরষের তেলের সঙ্গে অন্য কোনো তেল মেশানো তথা ব্লেন্ডিং করা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু ওই কারখানায় ব্লেন্ডিং মেশিন পাওয়া গেলেও মালিকের দাবি, নিষিদ্ধ করার পর আর তিনি ব্লেন্ডিং করেন না। যদিও ব্লেন্ডিং মেশিন দেখে প্রশাসনের সন্দেহ, এক বছর নয়, কয়েকদিন আগেই তা বন্ধ করা হয়েছে।
চাঁচলের কান্ডারনে অভিযানের পরেই মালিক সতর্ক হয়ে তা বন্ধ করেছেন কি না তা প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। কেননা ব্লেন্ডিং মেশিন পরীক্ষা করে সর্ষের তেল পাওয়া গিয়েছে। একবছর আগে ব্লেন্ডিং বন্ধ হলে মেশিনে তেল থাকার কথা নয় বলেই মনে করছে প্রশাসন। সেই তেলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। এমনকি গোডাউন ভর্তি কিছু খাদ্যপণ্য রাখা রয়েছে যার লাইসেন্স নেই। গীতা ট্রেডিং নামে তার ট্রেডিং লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু তিনি একাধিক নামীদামী ব্রান্ডের তেল বিক্রি করছেন বলেও প্রশাসন জানতে পেরেছে।
এমন তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন মহাকুমার স্বাস্থ্য কর্তা জয়ন্ত বিশ্বাস। মহকুমার শাসক সঞ্জয় পাল বলেন, আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হয়েছে এই কারখানায় যে তেল তৈরি করা হচ্ছিল তা সঠিক পদ্ধতি মেনে তৈরি হতো না। এছাড়া তেলের গুণমান নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারখানা থেকে সংগৃহীত তেলের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
যদিও কারখানার মালিক দিলীপ আগরওয়ালের দাবি, লাইসেন্স নিয়েই আগে ব্লেন্ডিং কারখানা চালাতাম। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর তা বন্ধ করে দিয়েছি। যদিও নামী কোম্পানির স্টিকার, স্টিকার তৈরির মেশিন কেন পাওয়া গেল তা নিয়ে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct