আপনজন ডেস্ক: ইরানে এই বছরের নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় নির্বাচন শুরু হয়। দেশটিতে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর এটি ত্রয়োদশতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
নির্বাচনে শুরুতেই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি তার ভোট প্রদান করেন। ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ইরানি জাতির দিন। আজকের ক্ষমতা জনগণের হাতেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটি ভোটও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যাতে না ভাবে আমার একটি ভোটে কী কাজ করবে। এরকম একেকটি ভোট যোগ করলে লাখো ভোটে পরিণত হয়।’
ইরানের মোট পাঁচ কোটি ৯৩ লাখের বেশি ভোটার সারাদেশের ৭৩ হাজার পাঁচ শ’ ভোটকেন্দ্রে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির পরবর্তীকে অষ্টম প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। তবে প্রয়োজনে রাত ১২টা ও অতিরিক্ত আরো দুই ঘণ্টা ভোটের সময়সীমা বাড়ানো যাবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চার বছর মেয়াদে তার দুই দফা দায়িত্ব পালন শেষ করায় তৃতীয় বার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন না। ২০১৩ ও ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরপর দুই বার সংস্কারপন্থী এই নেতা নির্বাচিত হন। ইরানের আইন অনুসারে দুবারের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আর প্রার্থী হতে পারবেন না।
ইরানের এবারের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইব্রাহিম রাইসি। বিভিন্ন সমীক্ষা তিনিই এগিয়ে রয়েছেন। নাটকীয় কিছু না ঘটলে তিনিই হতে যাচ্ছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট। কারণ, আহমেদিনিজাদের মতো শক্তিশালী প্রার্থীরা আগেই প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
যার ফলে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ইব্রাহিম রাইসিই বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। ইরানের বিভিন্ন রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তার ব্যানার, ফেস্টুন।
কে এই রাইসি? ইব্রাহিম রাইসি বর্তমান ইরানের প্রধান বিচারপতি। ৬০ বছর বয়সী রাইসি বর্তমানে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনী দৌড়ে শামিল হয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও একবার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, ওই সময় তিনি হাসান রুহানির কাছে পরাজিত হন। ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা খামেনি এবং রাইসির জন্ম একই স্থানে, দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে। খামেনির মতো না হলেও দেশটির সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থিমহলে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।
খামেনির মতো রাইসিরও দাবি, বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর বংশধর তিনি। বিশ্বনবীর রক্তসম্পর্কিত উত্তরাধিকার হওয়ার কারণে সবসময় কালো রঙের পাগড়ি পরেন তিনি।
তবে ইরানের গণতন্ত্রপন্থি বলয়ে তার জনপ্রিয়তা বেশ কম। কারণ, আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দেশটিতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রপন্থিরা, যারা ক্ষমতাসীন ইসলামী কট্টরপন্থি সরকারের বিরোধী। যুদ্ধ শেষে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার কারণে শত শত গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তেহরানের রেভ্যুলুশনারি আদালত সংক্ষিপ্ত বিচারকাজের পরই তাদের অধিকাংশকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। সে সময় রেভ্যুলুশনারি আদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন রাইসি। ওই বিচার প্রক্রিয়ার পরই খামেনির আস্থাভাজন হিসেবে হিসেবে উত্থান ঘটে তার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct