আপনজন ডেস্ক: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ করে এসেছেন। কিছুদিন আগে করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই বঞ্চনার অভিযোগ জোরালো হয়। এমনিতেই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ছিল, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ায় আর তাদের মুখে সোনার বাংলা গড়ার শোনা যাবে না। বরং, বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ বাড়তে পারে।
ইয়াস-এ ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও ওড়িশার চেয়ে বাংলাকে অনেক কম টাকা দেওয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠছিল কেন্দ্রের মনোভাব। এবার আরও বৃদ্ধি অভিযোগের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল কলকাতা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেইল)-এর সদর দফতরকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
কেন্দ্রীয় সরকারেরএই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বুধবার কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি দিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেইল) কাঁচামাল বিভাগের দফতর কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার ফলে এখানকার বহু কর্মী কাজ হারাবার আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তারপরেই পদক্ষেপ করা হল।
দু পাতার চিঠিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে লেখেন, আমি মিডিয়ার কাছ থেকে মুনে মর্মাহত হরাম যে কলকাতা থেকে সরতে চলেছে সেলের কাঁচামাল বিভাগের সদর দফতর বা আরএমডি। এই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের পক্ষে আবেদন জানান তিনি। চিঠিতে অমিত মিত্র জানান, আমি খবরটি জানার পরেই চমকে উঠেছি। এই সিদ্ধান্তে প্রচুর ঠিক শ্রমিক কাজ হারাবেন। স্থানান্তরের ফলে সমস্যায় পড়বেন অন্তত ১০০ জন স্থানীয় শ্রমিকও। লকডাউনের এই সময়ে স্থানান্তরের ফলে পরিবার নিয়ে নয়া বিপদে মুখোমুখি হবেন তারা।
সেই সঙ্গে অমিত মিত্র জানান, এই পদক্ষেপের ফলে প্রবল ক্ষতি হবে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এবং বার্ণপুর। এই দুটি কারখানা পুরোপুরি সেলের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এই দুই শিল্পাঞ্চল সেলের থেকে কাঁচামাল পায় ৬৫০ টাকা প্রতি টন দরে। একবার সেল চলে গেলে অন্যত্র জায়গা থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হবে তাদের। তখন দাম বেড়ে হবে ৯,৫০০ টাকা প্রতি টন। দুর্গাপুর ও বার্নপুর স্টিল প্ল্যান্টে কাজ করেন ১৪ হাজার মানুষ। লাভ হয় ১,৪৮৬ কোটি টাকা। এখন কেন্দ্রীয় সরকার যদি সেলকে সরিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়বে এই দুই ঐতিহ্যশালী শিল্পাঞ্চলগুলি।
বিধানসভা নির্বচানে এ রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির পর আচমকা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে অমিত মিত্র বলেছেন, বিজেপির ভোটে ভরাডুবির পরেই এই সিদ্ধান্তে নেওয়া হচ্ছে। বস্তূত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে লাভবান হবে ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড। অপরদিকে, লোকসানের সম্মুখীন হবে বাংলার শিল্পাঞ্চল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠনও। যদিও এখনও কেন্দ্রের তরফ থেকে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া বা ঘোষণা করা হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct